দীর্ঘ আলোচনা ও মতানৈক্যের পর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দ্বিতীয় দফার সংলাপের ২৩তম দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মধ্যাহ্ন বিরতির পর এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐকমত্য না হওয়ায় বিষয়টি কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কমিশন পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ চূড়ান্ত করে। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষ সরাসরি আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পাবে না। তবে অর্থবিল ব্যতীত অন্যান্য বিল উচ্চকক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। এসব বিল নিয়ে উচ্চকক্ষ পর্যালোচনা ও সুপারিশ দিতে পারবে, কিন্তু স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না। যদি কোনো বিল এক মাসের বেশি সময় আটকে থাকে, সেটিকে অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কোনো বিল প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ তা সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠাবে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নিম্নকক্ষই। এ ছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় উচ্চকক্ষের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করতে হবে এবং এই প্রার্থীদের অন্তত ১০ শতাংশ নারী হতে হবে—এটিও কমিশনের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। বিএনপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী জোট মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই জানায়, তারা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে নয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“পিআর পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে আমাদের মতভেদ রয়েছে। এ বিষয়ে ভিন্নমত লিখিত আকারে যুক্ত থাকলে আমরা কমিশনের প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে চাই না।”
এ ছাড়া, সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং আমজনতার দল উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করে প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকেও উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয়। তারা জানায়, আইন প্রণয়নের ক্ষমতা না থাকায় উচ্চকক্ষের প্রয়োজন তারা অনুভব করে না।