প্রেমিকার মন জয়ের গল্পে কেউ দেয় লাল গোলাপ, কেউ লেখে প্রেমপত্র। কিন্তু থাড রবার্টস চেয়েছিলেন এমন কিছু করতে, যা পৃথিবীর আর কোনো প্রেমিক আগে করেনি। আর সে জন্যই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নিরাপত্তার হৃদপিণ্ডে আঘাত করে তিনি চুরি করেছিলেন আসল চাঁদের পাথর!
২০০২ সালের এক গরম রাতে, মাত্র ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ নাসার সাবেক ইন্টার্ন প্রেমিকা টিফানি ফাউলারসহ চারজনের একটি গোপন টিম তৈরি করেন। তাদের চোখ ছিল ৭.৭ কেজি ওজনের চাঁদের পাথরে—যার প্রতিটি গ্রামের দাম ১,০০০ থেকে ৫,০০০ ডলার। কিন্তু লক্ষ্য টাকা নয়; রবার্টসের স্বপ্ন ছিল প্রিয় মানুষটির সঙ্গে “চাঁদের মাটিতে” থাকা।
পরিকল্পনাটা ছিল হলিউড থ্রিলারের মতো। রবার্টস হ্যাক করেন সিকিউরিটি ক্যামেরা, পরে নাসা কর্মীদের ব্যাজ ও বিশেষ পোশাক পরে ঢুকে পড়েন ল্যাবরুমে। নিঃশব্দে তুলে নেন সেই অমূল্য পাথর। সেদিন যেন পৃথিবীর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর চুরি সম্পন্ন হয়েছিল—প্রেমের নামে।
কিন্তু প্রতিটি সিনেমার মতো এখানেও ছিল টুইস্ট। বেলজিয়ামের এক ক্রেতার কাছে পাথর বিক্রি করতে গেলে, ক্রেতা সন্দেহ করেন। খবর যায় এফবিআইয়ের কাছে। শুরু হয় ছায়া অভিযান। অবশেষে ফাঁদে ফেলে গ্রেপ্তার করা হয় পুরো দলকে।
আদালতে দাঁড়িয়ে রবার্টস বলেছিলেন, “আমি এটা করেছি ভালোবাসার জন্য, যাতে মনে হয় আমরা এমন কিছু করছি যা আগে কেউ করেনি।” সেই ভালোবাসার দাম পড়ে যায় ৮ বছরের কারাদণ্ডে। তবে ২০০৮ সালে মুক্তি পান তিনি। ফাউলার ও আরেক সহযোগীকে দেওয়া হয় সমাজসেবা, গৃহবন্দী ও জরিমানা; অপর এক সদস্য পান ৬ বছরের সাজা।
কারাগারের দিনগুলোতে রবার্টস লিখে ফেলেন ৭০০ পৃষ্ঠার এক বই। আজ তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ হিসেবে কাজ করছেন। আর তার এই অবিশ্বাস্য প্রেম-চুরির কাহিনি নিয়ে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় Sex on the Moon—যা প্রমাণ করে, কারও কারও ভালোবাসা সত্যিই আকাশ ছুঁয়ে যায়।