১২ অক্টোবর শুরু হওয়া টাইফয়েডের টিকা নিচ্ছে শিশুরা। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দৈনিক আমার দেশ ২৬ অক্টোবর (রবিবার) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় চার কোটি ৯০ লাখ শিশু এ কার্যক্রমের আওতায় আসবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত, নিরাপদ ও কার্যকর। তবে দেশি-বিদেশি কিছু গবেষক টিকার ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতা ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সরকারের দাবি: নিরাপদ ও হালাল টিকা
রাজধানীর সিরডাপে ১২ অক্টোবর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও অনুমোদিত এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এটি পরীক্ষামূলক নয়। তাঁর দাবি, টিকাটিতে শরিয়তবিরোধী কোনো উপাদান নেই এবং এটি সৌদি হালাল সেন্টারের সার্টিফায়েড।
তিনি জনগণকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য নেওয়ার আহ্বান জানান।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এতে সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ, গ্যাভি–দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রয়োগ করা হলেও বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাঁর মতে, দেশে টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে এই টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গবেষকদের আশঙ্কা: পর্যাপ্ত ডেটা ছাড়া গণটিকা
সরকারি আশ্বাসের বিপরীতে একদল গবেষক বলছেন, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এই টিকাটিকে গণটিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসে কর্মরত বিজ্ঞানী ড. রেজাউল করিম, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ড. জুবায়ের রহমান এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক সিনিয়র ম্যানেজার ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এক যৌথ বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শিশুদের দেওয়া টিকা ‘টাইফিবেভ’-এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি।
টিকাটি ভারতের হায়দরাবাদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়োলজিক্যাল ই লিমিটেড উৎপাদন করে। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে আগে ভারত বায়োটেক কোম্পানির উৎপাদিত ‘টাইপবার টিসিভি’-এর ট্রায়াল হয়েছিল এবং সেটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছিল। অথচ এখন যে টিকা (টাইফিবেভ) দেওয়া হচ্ছে, তার ক্লিনিক্যাল এফিকেসি বা দীর্ঘমেয়াদি সেফটি ডেটা পাওয়া যায়নি।
তারা বলেন, টাইপবার টিসিভি ও টাইফিবেভ এক নয়। দুই টিকার কেরিয়ার প্রোটিন, ভি পলিস্যাকারাইড সোর্স, লিংকার কেমিস্ট্রি ও এক্সিপিয়েন্টসের মতো উপাদানে পার্থক্য রয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়াতেও কিছু পার্থক্য টিকার মানে প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, টাইফিবেভের ফেজ–২ ও ফেজ–৩ ট্রায়ালে মাত্র ৪২ দিন পর্যন্ত সেফটি ফলো-আপ করা হয়েছে, যা তাদের মতে একটি ব্যাকটেরিয়াল টিকার দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য অপ্রতুল। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত টিকার (যেমন ভিভোটিফ ও টাইফিম ভিআই) কার্যকারিতা ৩৪ থেকে ৪৮ মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষকদের মতে, যেহেতু টাইপবার টিসিভি ও টাইফিবেভের গঠন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পার্থক্য রয়েছে, তাই টাইফিবেভের আলাদা করে দীর্ঘমেয়াদি ফলো-আপ করা জরুরি।
সূত্র: দৈনিক আমার দেশ


