logo
ads

ইতালি– ইতিহাস, সৌন্দর্য আর সম্পর্কের দেশে জীবনযাপন

যাপ্র ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:২১ পি.এম
ইতালি– ইতিহাস, সৌন্দর্য আর সম্পর্কের দেশে জীবনযাপন

ছবি: সংগৃহীত

ইতালি—রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার, রেনেসাঁর জন্মভূমি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও মাইকেলেঞ্জেলোর শিল্পভূমি। এ দেশ শুধু অতীতের গৌরবেই নয়, বরং আধুনিক ইউরোপের মধ্যেও এক স্বতন্ত্র জীবনের ছন্দে এগিয়ে চলে। পাহাড়ি গ্রাম থেকে ভেনিসের খাল, ফ্লোরেন্সের গ্যালারি থেকে সিসিলির লেবুক্ষেত—সবকিছুতেই ছড়িয়ে আছে এক ধীর, কিন্তু গভীর জীবনদর্শন।

খাদ্য: জীবনযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু

ইতালির মানুষের জীবনে খাবার একটি সাংস্কৃতিক রীতির মতো। ‘La dolce vita’ অর্থাৎ "মিষ্টি জীবন" তাদের দর্শন—যেখানে খাবার কেবল প্রয়োজন নয়, বরং আনন্দ, সংযোগ ও জীবনের একটি শিল্প।

একজন রোমবাসী অফিসকর্মী দিনের মধ্যভাগে নিশ্চিন্তে "প্রানজো" বা মধ্যাহ্নভোজে যায়—পাস্তা, রুটি, সালাদ, আর এক কাপ এসপ্রেসো। সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবার মিলে পিৎজা বানানো কিংবা গ্রামে গিয়ে ‘nonna’ (দাদি/নানি)-র হাতের ট্যাগলিয়াটেল খাওয়া যেন একধরনের ধর্মীয় আচারের মতো।

বাসস্থান ও পারিবারিক জীবন

ইতালিতে পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনও অনেক পরিবারে ৩-৪ প্রজন্ম একসঙ্গে বসবাস করে বা কাছাকাছি থাকে। সন্তানরা প্রায়শই বিয়ের পরও বাবা-মায়ের বাড়িতে থেকে যায় বা বাড়ির পাশে চলে আসে।

গ্রামীণ ইতালিতে জীবন ধীর, শান্ত, সম্পর্কনির্ভর। প্রতিদিন সকালে বাজারে যাওয়া, পাশের দোকানে পরিচিত মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়, ক্যাফেতে বসে রুটিন এসপ্রেসো খাওয়া—এসবই দৈনন্দিন জীবনের অংশ।

শহরাঞ্চলে, যেমন মিলান বা রোমে, জীবন তুলনামূলকভাবে দ্রুত গতির, কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য শহরের তুলনায় এখনো অনেক ‘মানবিক’। অফিস শেষে সময়মতো বন্ধ হয় দোকানপাট, লোকজন সন্ধ্যায় বাইরে হাঁটতে বের হয়—যা তারা বলে “la passeggiata”

বয়স্ক জনগোষ্ঠী ও জীবনধারা

ইতালি ইউরোপের অন্যতম বয়স্ক জনসংখ্যার দেশ। বহু মানুষ ৮০-৯০ বছর বয়সেও গ্রামে নিজের মতো করে জীবন যাপন করছেন—মাঝে মাঝে রেডিও শুনে, বাগান করে, গির্জায় গিয়ে। এটা বলে দেওয়া চলে যে ইতালির মানুষ দীর্ঘজীবী এবং শান্তিপূর্ণ বার্ধক্য উপভোগ করেন।

তবে সমস্যা আছে—বয়সভিত্তিক পেনশন সিস্টেমে চাপ, তরুণদের চাকরি সংকট, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তরুণরা শহর ছাড়ছে ভালো ভবিষ্যতের খোঁজে।

কাজ ও অর্থনীতি: বৈপরীত্যপূর্ণ বাস্তবতা

ইতালিতে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান বেশ স্পষ্ট। উত্তরের শহরগুলো—মিলান, তুরিন, ভেনিস—শিল্প ও ব্যবসার কেন্দ্র। দক্ষিণের এলাকাগুলো তুলনামূলকভাবে কৃষিনির্ভর, এবং দারিদ্র্যের হার বেশি।

একজন মিলানের যুবক হয়তো টেক কোম্পানিতে চাকরি করে, মেট্রোতে চড়ে অফিসে যায়, ফ্যাশন আর ডিজাইনের জগতে নিজেকে দেখতে চায়। অথচ সিসিলির একটি গ্রামে সমবয়সী যুবক হয়তো বাবার অলিভ বাগান সামলাচ্ছে, এবং পাশেই স্থানীয় ক্যাফেতে বসে বিকেলে কার্ড খেলছে।

শিল্প, ধর্ম ও জীবনের সৌন্দর্য

ধর্ম (বিশেষত ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্ম) ইতালির সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। প্রায় প্রতিটি শহরেই একটি করে বড় গির্জা আছে, যেখানে প্রতি রবিবার মানুষ এখনো প্রার্থনা করতে যায়। পাশাপাশি, জীবনকে সৌন্দর্য দিয়ে বাঁচার প্রচেষ্টা ইতালির মানুষের চিন্তাধারায় গেঁথে আছে।

"Bella figura" কথাটি ইতালীয়রা প্রায়ই ব্যবহার করে—যার অর্থ ‘ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা’। এটি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং মার্জিত আচরণ, রুচি, আত্মসম্মান ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

জীবন যেখানে যেমন

ইতালির জীবনযাত্রা এক ধরনের ‘সাবলীল শিল্প’। এখানে তাড়াহুড়ো কম, কিন্তু গভীরতা বেশি। সম্পর্ক, খাদ্য, পরিবার, প্রকৃতি—সবকিছুর প্রতি যত্নশীল মনোভাব ইতালির সমাজকে এক অনন্য জায়গায় দাঁড় করায়।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ