logo
ads

ফ্রান্সে মানুষের দুর্দশা ও নৈতিকতাহীন সমাজের চিত্র

যাপ্র ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২৮ পি.এম
ফ্রান্সে মানুষের দুর্দশা ও নৈতিকতাহীন সমাজের চিত্র

ফ্রান্সের প্যারিস শহর || ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্স, ইউরোপের একটি উন্নত ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে ফ্রান্সের অবদান বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তবে এই বৈভবের আড়ালে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনে এক গভীর দুর্দশা ও সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে।

বর্তমান ফ্রান্সে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে কিছু মানুষের বিলাসী জীবনযাত্রার বিপরীতে উপশহর ও প্রান্তিক এলাকায় নিম্নবিত্ত মানুষেরা প্রতিদিন জীবিকার জন্য সংগ্রাম করছে। বাড়িভাড়া, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে অভিবাসী পরিবারগুলো, যারা মূলত আফ্রিকান বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে, তারা কর্মসংস্থান ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের "ইয়েলো ভেস্ট" বা গিলেট জোয়ন আন্দোলন ছিল এক বড় সামাজিক প্রতিবাদ। তারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং করের বোঝার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। যদিও আন্দোলনটি আর্থ-সামাজিক ন্যায্যতার দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই তা সহিংস রূপ ধারণ করে, যা সমাজে এক ধরনের অনৈতিকতার চিত্রও প্রকাশ করে।

এই দুর্দশার সাথে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্রও আজকের ফ্রান্সে কম নয়। ভোগবাদী সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক দায়িত্বের অভাব ইত্যাদি সমস্যার কারণে সমাজে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। যৌনতা, মাদকাসক্তি, এবং সহিংসতা কিশোরদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। স্কুলে সহপাঠীদের প্রতি হিংস্রতা, অনলাইন বুলিং, এমনকি বন্দুক সহিংসতা এখন আর কেবল আমেরিকার সমস্যা নয়, ফ্রান্সেও তা বাড়ছে।

তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে। পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – এই মূল তিনটি ভিত্তি যদি সমাজে নৈতিকতা গঠনে ব্যর্থ হয়, তাহলে একটি উন্নত দেশও ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। অভিভাবকদের সময়ের অভাব, শিক্ষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ, এবং সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব ফ্রান্সের সামাজিক কাঠামোকে এক বিপজ্জনক মোড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া রাজনৈতিক স্তরেও নৈতিকতার অভাব লক্ষণীয়। দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও জনস্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ব্যর্থতা সাধারণ মানুষের রাষ্ট্রের উপর আস্থা হারাতে বাধ্য করছে। ফলে সমাজে বিক্ষোভ, অসন্তোষ ও সংঘাতের জন্ম দিচ্ছে, যা ফ্রান্সের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

এই অবস্থার পরিবর্তন কেবল অর্থনৈতিক সমতা দিয়ে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক ন্যায়বোধ, নৈতিক শিক্ষা, এবং নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও রাষ্ট্র—এই তিনটি স্তর যদি একযোগে কাজ করে, তাহলে নৈতিক সমাজ গড়া সম্ভব।

ফ্রান্সের বর্তমান চিত্র আমাদের শেখায় যে উন্নত অবকাঠামো বা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মানবিকতা, ন্যায্যতা ও নৈতিকতার বিকল্প হতে পারে না। প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন মানুষ শুধু বেঁচে থাকবে না—মানবিক মর্যাদায় বাঁচবে।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ