logo
ads

ব্রাজিল– উৎসব আর বৈষম্যের দেশ

যাপ্র ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:০৮ পি.এম
ব্রাজিল– উৎসব আর বৈষম্যের দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিল—দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ। অনেকের চোখে এটি এক অনিন্দ্য সুন্দর স্বপ্নভূমি—অ্যামাজনের গভীর বন, রিও ডি জেনেইরোর সৈকত, কার্নিভালের রঙ আর ফুটবলের আবেগে ভরা। কিন্তু এই গ্ল্যামারের নিচে লুকিয়ে আছে বাস্তব জীবনের এক করুণ ও সংগ্রামী চিত্র, যা দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা।

সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়

ব্রাজিলের সংস্কৃতি তার বহুজাতিক ও বর্ণবৈচিত্র্যপূর্ণ জনগণের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে—আফ্রিকান, পর্তুগিজ, আদিবাসী এবং ইউরোপীয় ঐতিহ্যের সম্মিলন। সঙ্গীত, নাচ (বিশেষত সাম্বা ও বসা নভা), ও ফুটবল দেশটির মানুষের আবেগ ও আত্মপরিচয়ের অংশ। ছোট বস্তিগুলোতেও সন্ধ্যায় রেডিও থেকে সাম্বার ছন্দ ভেসে আসে, আর ফুটবল যেন শিশুদের জন্মগত অধিকার।

বাস্তবতা: দারিদ্র্য ও ফাভেলার জীবন

ব্রাজিলে প্রায় ২ কোটি মানুষ ফাভেলা নামক অনানুষ্ঠানিক বসতিতে বাস করে, যেগুলো মূলত পাহাড়ি ঢালে বা শহরের বাইরে গড়ে ওঠা বস্তি এলাকা। এসব এলাকায় প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, যেমন—পর্যাপ্ত পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, ও নিরাপদ বাসস্থান।

একজন নারী, মারিয়া—তিনি হয়তো সকালে উঠে ২ ঘণ্টা বাসে করে শহরের ধনী এলাকায় গৃহকর্মে যান। এরপর বাড়ি ফিরে তিন সন্তানকে দেখাশোনা করেন। এটাই তার প্রতিদিনের জীবন, যেখানে অবকাশ বলে কিছু নেই। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি প্রতিটি রিয়াল (ব্রাজিলের মুদ্রা) সঞ্চয় করেন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা: অসম প্রাপ্তি

ব্রাজিলে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা বিনামূল্যে হলেও মানের দিক থেকে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। শহরের ধনী শিশুদের জন্য বেসরকারি স্কুল, উন্নত কোচিং ও সুযোগ থাকলেও, ফাভেলার স্কুলগুলোতে শিক্ষকসংকট, অপর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে শিক্ষার মান অনেক কম।

স্বাস্থ্যসেবা (Sistema Único de Saúde বা SUS) সরকারিভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু হাসপাতালে লম্বা লাইন, ডাক্তারের ঘাটতি, এবং ওষুধের অনুপস্থিতি সাধারণ ঘটনা।

অপরাধ ও নিরাপত্তা: ভয় আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেঁচে থাকা

ব্রাজিলের বড় শহরগুলো, যেমন—রিও ডি জেনেইরো বা সাও পাওলো, অপরাধ প্রবণতায় পরিচিত। বিশেষত ফাভেলাগুলোতে ড্রাগ কার্টেল, অস্ত্রব্যবসা, এবং পুলিশি সহিংসতা সাধারণ বিষয়। অনেক কিশোর অপরাধের ফাঁদে পড়ে যায় কারণ তাদের সামনে বিকল্প কোনো সুযোগ নেই।

তবে শুধু অন্ধকারই নেই। সম্প্রতি “Favela Rising”-এর মতো সামাজিক প্রকল্প ও এনজিও গুলো শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের গ্যাং থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। স্থানীয় কমিউনিটি লিডাররা শিল্প, খেলাধুলা, এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন আনছেন।

ফুটবল: এক জাতির আশা ও অহংকার

ফুটবল ব্রাজিলে কেবল খেলা নয়—এটি জীবনের এক ভাষা। বিশ্বজয়ী দল, পেলের ঐতিহ্য, নেইমারের বর্তমান—এসব কিছু মিলিয়ে ফুটবল অনেক যুবকের কাছে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির স্বপ্ন। ছোট একটি ফ্ল্যাটের ছাদে প্রতিদিন সকালে ১২ বছরের জোয়াও বল নিয়ে অনুশীলন করে, যেমনটা করেছিল পেলে।

আশা ও পরিবর্তনের পথে

দারিদ্র্য, বৈষম্য, অপরাধ—এসব সত্ত্বেও ব্রাজিলের মানুষ থেমে থাকে না। নারীরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হচ্ছে, তরুণেরা প্রযুক্তি ও ডিজিটাল শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। কার্নিভাল শুধু এক উৎসব নয়, বরং এক প্রতীক—এই দেশ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উদযাপন করতে জানে।

একজন ব্রাজিলিয়ানের চোখে জীবন কখনো সহজ নয়, কিন্তু তবুও সে হাসে, নাচে, গান গায়। কারণ, জীবন যেখানে যেমনই হোক, সেখানে ভালোবাসা, পরিবার, ও স্বপ্ন এখনো টিকে আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ