logo
ads

তেলসম্পদ কি মুসলিম বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ

ড. মো. মিজানুর রহমান

প্রকাশকাল: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:০১ পি.এম
তেলসম্পদ কি মুসলিম বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ

মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তেল। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের মোট প্রমাণিত তেলের প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি এ অঞ্চলের, যা এ অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই তেল তাদেরকে বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রধান রফতানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তেলের আয় তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরবের মোট জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ আসে তেল খাত থেকে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড়ে বার্ষিক ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে তেল রফতানি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি বছর প্রায় ৯০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়েছে। এই আয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জাতীয় বাজেটের ৭০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত গঠন করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০২৩ সালের বাজেটের ৪৫ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে, যা তেলের আয়েই সম্ভব হয়েছে। এই তেলের আয়ের ব্যবহার ব্যাপকভাবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, বৈশ্বিক পরিবেশ সচেতনতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার এবং তেলের সীমিত মজুদের কারণে এই অঞ্চলের তেলভিত্তিক অর্থনীতি টেকসই নয়। তাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় তেলসম্পদের বিকল্প অর্থনৈতিক কৌশলের দিকে ঝুঁকছে। উদাহরণস্বরূপ সৌদি আরব ‘ভিশন-২০৩০’ উদ্যোগের মাধ্যমে তেলনির্ভরতা হ্রাস করে পর্যটন, প্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, রিয়েল এস্টেট ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তেলের পরবর্তী যুগে টিকে থাকতে হলে মধ্যপ্রাচ্যকে বহুমুখী অর্থনীতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় তেল ফুরিয়ে গেলে তাদের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে পড়তে পারে। এই প্রবন্ধে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের প্রভাব ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক সঙ্কট ও সামাজিক পরিবর্তন বিবেচনায় আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ। পাশাপাশি ভবিষ্যতে তেলনির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের সম্ভাবনা আলোচনা করা।

ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তেলসম্পদ

মধ্যপ্রাচ্য এক দিকে বিশ্বের সবচেয়ে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল, অন্য দিকে সবচেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অস্থিতিশীল এলাকা। এই দ্বৈত চরিত্রের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ তেলসম্পদ এবং সেই সম্পদ নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা ও হস্তক্ষেপ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের ২০০৬ সালের তথ্যানুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সাল থেকেই সৌদি আরবসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থাপন করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ব তেল সরবরাহের ওপর প্রভাব বজায় রাখা। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সাদ্দাম হোসেনকে অপসারণ করে তেলের বাজারে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। যুদ্ধের পর ইরাকের ৮৭ শতাংশ তেল বøক পশ্চিমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে যায়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মিথ্যা জনবিধ্বংসী অস্ত্রের অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করেছিল কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একমত যে, আসল উদ্দেশ্য ছিল তেল নিয়ন্ত্রণ। ২০২৪ সালের তথ্যানুযায়ী, ইরাকের প্রমাণিত তেল মজুদ ১৪৭ বিলিয়ন ব্যারেল। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতনের অন্যতম কারণ ছিল লিবিয়ার তেলক্ষেত্র। তথ্যানুযায়ী লিবিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল রিজার্ভের দেশ (৪৮ বিলিয়ন ব্যারেল), যা নিয়ন্ত্রণে নিতে পশ্চিমা জোট ন্যাটো সামরিক হামলা চালায়।

ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের অন্যতম কারণ মধ্যপ্রাচ্যে একটি নির্ভরযোগ্য সহযোগী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যা তেলনির্ভর রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যে ৪০টির বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যার বেশির ভাগ উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ঘিরে। ইরান, লিবিয়ার মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে মার্কিন হস্তক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞা অনেকাংশে তেলের রাজনীতির অংশ। আইইএর ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের উপর ২০১৮ সালের পরে পুনরায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তেল রফতানি ২০১৭ সালের প্রতিদিন ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে ২০২০ সালে শূন্য দশমিক ৩ লাখ ব্যারেলে নেমে আসে। ইরাক ও সিরিয়ায় তেলের জন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ইতিহাস দীর্ঘ। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন বৈরিতা, ইসরাইলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাতের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে পশ্চিমা শক্তির ভূমিকা- এসবই তেল নিয়ন্ত্রণের বৃহৎ কৌশলের অংশ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

তেলের আয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকিতে ফেলে। যখন তেলের দাম হঠাৎ কমে যায়, তখন এই দেশগুলো মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে। আইএমএফের ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৬ সালের তেলের মূল্য পতনকালে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি গড়ে দেড় শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ২০২০ সালের কোভিড মহামারীর সময় তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অর্থনীতি মারাত্মক ধাক্কা খায়। এ সঙ্কট অনেক দেশকে সরকারি ব্যয় কমাতে এবং বড় বাজেট ঘাটতিতে ফেলেছিল। তেল-নির্ভরতার কারণে অনেক দেশ শিল্প, প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।

তেলের রাজস্বের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ‘ৎবহঃরবৎ ংঃধঃব’ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যেখানে জনসাধারণকে কর দিয়ে নয়, তেল বিক্রির আয়ে রাষ্ট্র চলাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের তথ্যমতে, সৌদি আরবে সরকারি চাকরিজীবীদের ৭০ শতাংশের বেশি তেলভিত্তিক রাজস্বে বেতন পান, যা কর্মপ্রেরণার ঘাটতি তৈরি করে। আইএলওর ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, আরব যুবাদের মধ্যে ২০২৩ সালে বেকারত্বের হার ছিল ২৭ শতাংশ, যা বিশ্বের সর্বোচ্চগুলোর একটি। এটি ‘বিনা শ্রমে আয়’-এর মনোভাবের ফল। ২০২৩ সালের উপসাগরীয় লেবার রিপোর্ট অনুযায়ী সে অঞ্চলের গৃহস্থালি, নির্মাণ ও হাসপাতাল খাতে ব্যবহৃত অভিবাসী শ্রমিক স্থানীয় নাগরিকদের অধিকাংশই সরকারি ভাতায় চলেন।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ২০২৩ সালের যুদ্ধের খরচসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল ও ভৌগোলিক আধিপত্য নিয়ে চলমান যুদ্ধে ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষতি হয়েছে প্রায় আট ট্রিলিয়ন ডলার।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক অঞ্চল। ২০১৮-২২ মেয়াদে বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির ৩২ শতাংশই করেছে শুধু মধ্যপ্রাচ্য। একা সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক, প্রতি বছর গড়ে ১০-১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। অন্য দিকে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রতি বছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে উপার্জন করছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশবিষয়ক ২০২২ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৩০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস খাত থেকে আসে, যা পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। দীর্ঘমেয়াদে তেলসম্পদের অবসান ও জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ‘ডাচ রোগ’-এর ফলে বিভিন্ন দেশেই বেসরকারি খাত ও বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে গেছে।

তেল সংরক্ষণ, রফতানি, তেলের মূল্য নির্ধারণ, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সব ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ওপেকের ২০২৪ সালের তথ্যানুযায়ী এই সংস্থার সদস্য দেশগুলোর ৬৫ শতাংশ তেলই প্রসেস ও রফতানি হয় পশ্চিমা দেশগুলোর কোম্পানির মাধ্যমে। তেলের পেট্রো-ডলার বিনিময় পশ্চিমাদের মুদ্রা ও আর্থিক শক্তি টিকিয়ে রাখছে। মুসলিম দেশগুলো যদি তেল বিক্রিতে ডলার বাদ দিয়ে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করত, তাহলে পশ্চিমা অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেত।

তেল এক দিন নিঃশেষ হবে। সেই প্রেক্ষাপটে যদি মধ্যপ্রাচ্য বিকল্প অর্থনীতিতে প্রস্তুত না হয়, তা হলে তারা ভয়ানক ধসের মুখে পড়বে। আইইএ ২০২৩ সালে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তেল চাহিদা ৩০ শতাংশ কমে যাবে, কারণ বিদ্যুৎচালিত যানবাহন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। সৌদি আরব, কুয়েত ও ইরাকের তেল মজুদ ৫০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। তখন রাজস্ব হারিয়ে গিয়ে বাজেট ঘাটতি, দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। ইউএই ইতোমধ্যেই তাদের রিজার্ভ তেলের বাইরে অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণে কাজ করছে, তবে বেশির ভাগ দেশ এখনো তেলের ওপর নির্ভরশীল।

তেল বন্ধ বা চাহিদা হ্রাস হলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সম্ভাব্য আর্থিক বিপর্যয় বলতে গেলে, জিডিপির ৫০-৯০ শতাংশ আসে তেল থেকে; এই উৎস বন্ধ হলে বাজেট ঘাটতি হবে ব্যাপক। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, যদি ২০৫০ সালের মধ্যে তেলের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, তা হলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ বড় ধসের মুখে পড়বে এবং বছরে গড়ে ২-৩ শতাংশ জিডিপি হারাবে। তেলভিত্তিক অর্থনীতির কারণে বহু দেশেই উৎপাদন ও শিল্পক্ষেত্র অগ্রসর হয়নি। ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ২০২৩ সালে বেকারত্বের হার ছিল গড়ে ৯-১২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুবাদের মধ্যে এই হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, দক্ষ কর্মশক্তির ঘাটতি ও আমদানিনির্ভরতার কারণে প্রতি বছর উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। এমনকি অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান খাত যথেষ্ট বিকশিত হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল ছাড়াও রয়েছে পর্যটন, কৃষি, খনিজ সম্পদ, ধর্মকেন্দ্রিক অর্থনীতি (যেমন- হজ ও ওমরাহ)। কিন্তু তেল সহজ আয় হিসেবে উপস্থিত হওয়ায় তারা বিকল্প খাতের দিকে দৃষ্টি দেয়নি। সৌদি হজ অথরিটির ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, হজ থেকে ২০২৩ সালে দেশটির আয় হয়েছে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই খাত আরো উন্নয়ন করলে তা তেলের বিকল্প হতে পারত। তেলভিত্তিক অর্থনীতিতে অল্প কিছু পেশাজীবী কাজ পায়, ফলে উদ্যোক্তা ও কৃষিনির্ভর উন্নয়ন হয়নি। অর্থনীতিবিদদের মতে, তেল না থাকলে এসব দেশ শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে দক্ষতা অর্জনে বেশি মনোযোগ দিত।

তেলের বিকল্প হিসেবে কৃষি, হালাল খাদ্য শিল্প, পর্যটন, প্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সৌদি ভিশন ২০৩০ মডেলের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প আয়ের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। শ্রমবাজারে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নাগরিকদের আধুনিক শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করতে হবে। কর্মবিমুখ জীবনচক্র ভেঙে কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য আর্থিক ভর্তুকি ও সহায়তা পুনর্গঠন করতে হবে। পশ্চিমা সামরিক নির্ভরতা কমিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। তেল বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রার (যেমন- ইউয়ান, ইসলামী গোল্ড দিনার) ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তেল শেষ হওয়ার সম্ভাব্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠন ও এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা উচিত। তেলের আয়ের স্বচ্ছতা, সামাজিক বণ্টন ও দুর্নীতিবিরোধী শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করতে হবে। নাগরিক অংশগ্রহণ ও জবাবদিহির কাঠামো উন্নত করতে হবে।

গবেষক মালিক ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে তেলের রাজনীতিকে ‘আধুনিক রাজ্যের অর্থনৈতিক অভিশাপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, তেলসম্পদের ওপর নির্ভরতার কারণে দেশগুলো এক দিকে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছে, অন্য দিকে অভ্যন্তরীণ শ্রেণিবিভেদ ও রাজনৈতিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলকে সফল হতে হলে তেলের অর্থনীতি থেকে বের হতে এবং পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে; মুসলিম দেশগুলোর পারস্পরিক দ্ব›দ্ব মেটাতে হবে। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ও সবুজ অর্থনীতি গ্রহণ করতে হবে; তা হলেই তেলসম্পদ অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ