এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হলো ওসমান হাদিকে

জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে অসপ্রে এভিয়েশনের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আহত হাদিকে নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থার মৌলিক পার্থক্য খুব বেশি না থাকলেও হাদির শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর এবং হাদির ভাই ওমর বিন হাদি। এর আগে সরকার হাদির চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

হাদির সঙ্গে তার দুই ভাই সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। ডা. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করা হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগে তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

চিকিৎসা বোর্ড জানিয়েছে, হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। কিডনি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বজায় থাকলেও মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকি রয়ে গেছে। নতুন করে করা সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি এবং ফোলাভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আবদুল আহাদ জানান, ফুসফুসের কার্যকারিতা বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও মস্তিষ্কের গুরুতর আঘাতের কারণে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে ইউরিন উৎপাদন, অ্যাসিড-বেস ব্যালান্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এছাড়া ব্রেন স্টেমে আঘাত ও অতিরিক্ত চাপের কারণে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনে ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্র স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ব্লাড সুগারও নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।

চিকিৎসা বোর্ড জানিয়েছে, হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন হলেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তার সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক দল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।