logo
ads

মস্তিষ্ক কি নিজে সরাসরি ব্যথা অনুভব করে? জানুন এক বিস্ময়কর সত্য!

যাপ্র ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৬ পি.এম
মস্তিষ্ক কি নিজে সরাসরি ব্যথা অনুভব করে? জানুন এক বিস্ময়কর সত্য!

ছবি: সংগৃহীত

আমরা প্রায়ই বলি — “মাথা ধরে গেছে”, “মাথার ব্যথায় কাজ করতে পারছি না”। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছি, আসলে মাথা নয় — আমাদের মস্তিষ্ক নিজেই ব্যথা অনুভব করতে পারে না! এই তথ্য শুনে অবাক হওয়ারই কথা। কারণ ব্যথার অনুভূতির কেন্দ্র যেখানে, সেটিই আবার ব্যথা অনুভব করে না — ব্যাপারটা কেমন যেন গোলমেলে মনে হয়। অথচ এটাই বিজ্ঞানসম্মত সত্য।

মস্তিষ্কের টিস্যুতে নেই ব্যথা-সংবেদী রিসেপ্টর

আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ‘নোসিসেপ্টর’ (nociceptors) নামে বিশেষ স্নায়ু-রিসেপ্টর থাকে, যা ব্যথা বা ক্ষতিকর উদ্দীপনা শনাক্ত করে সেগুলোর সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়।
কিন্তু মস্তিষ্কের নিজস্ব টিস্যুতে কোনো নোসিসেপ্টরই থাকে না। তাই এটি আঘাত পেলেও তা অনুভব করে না। এ কারণেই নিউরোসার্জারি বা ব্রেইন অপারেশনের সময় রোগী অনেক সময় জেগে থেকেও ব্যথা অনুভব করেন না।

তাহলে মাথা ব্যথা কোথা থেকে আসে?

যদিও মস্তিষ্ক ব্যথা অনুভব করে না, তবে মাথার বিভিন্ন গঠন —

  • মাথার ত্বক (scalp),

  • মেনিনজেস (মস্তিষ্ক ঘেরা আবরণ),

  • রক্তনালী এবং

  • ঘাড়ের পেশি —
    সবগুলোতেই ব্যথা-সংবেদী স্নায়ু থাকে।

যখন এদের কোনো একটিতে চাপ, প্রদাহ, টান অথবা রক্তপ্রবাহের সমস্যা হয়, তখন তারা সংকেত পাঠায়। মস্তিষ্ক সেই সংকেতকে ব্যথা হিসেবে ব্যাখ্যা করে। ফলে আমরা “মাথা ব্যথা” অনুভব করি, যদিও বাস্তবে মস্তিষ্ক নয়, তার চারপাশটাই কষ্ট পাচ্ছে। যেমন- ঠান্ডা আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানি দ্রুত গিলে ফেললে অনেকের মাথায় তীব্র এক ব্যথা অনুভূত হয় — যাকে বলা হয় "brain freeze"। এটি আসলে মুখ ও গলার পেছনের রক্তনালীর হঠাৎ সংকোচন‑বিস্তারজনিত সমস্যার কারণে হয় — মস্তিষ্ক নয়, বরং সেই রক্তনালী সংকেত পাঠিয়ে দেয়।

কিন্তু ব্যথা তো মস্তিষ্কেই অনুভব করি!

হ্যাঁ, ব্যথার সংবেদন শরীরের কোথাও উৎপন্ন হলেও তার ব্যাখ্যা হয় মস্তিষ্কেই। এই ব্যাখ্যাই আমাদের ব্যথা অনুভব করায়। তাই কেউ যদি চোখ বন্ধ করে গরম লোহা ও ঠান্ডা ধাতব টুকরার স্পর্শ পার্থক্য না বুঝতে পারে, তাহলে শুধুমাত্র আশঙ্কা বা পূর্বধারণা থেকেও ব্যথা অনুভব হতে পারে। এমনকি একই আঘাত দুই ভিন্ন ব্যক্তির কাছে একেকভাবে ব্যথা অনুভব হয় — কারণ সেটি নির্ভর করে কে কতটা ভয় পাচ্ছে, বা প্রস্তুত ছিল।

এই সত্যের ওপর ভিত্তি করে যা যা করা যায়:

  • নিউরোসার্জারিতে রোগীকে ঘুম না পাড়িয়েও মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা যায়।

  • মাইগ্রেন ও হেডেক ট্রিটমেন্টে মাথার বাইরের টিস্যুর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

  • মনোচিকিৎসা বা ব্যথা ব্যবস্থাপনায় ব্যথা না হলেও কেবল ভয় বা পূর্বানুমান থাকলেও মানুষের ভোগান্তি হতে পারে — এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

মস্তিষ্ক নিজে ব্যথা অনুভব না করলেও ব্যথার অনুভূতির মূল কেন্দ্র এটি। এই দ্বৈত সত্য আমাদের জানায়—শরীর ও মনের ব্যথা, অনুভূতি এবং ব্যাখ্যা—সবকিছু একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এমন ছোট্ট এক তথ্য আমাদের ভাবনার গভীরতায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

 

dainikamarbangla

বিশেষ সংবাদ