কল্পনা করুন, আপনি ফুলের পাপড়িতে দাঁড়ালেন— আর সঙ্গে সঙ্গে সেই ফুলের স্বাদ জিহ্বায় নয়, পায়ে অনুভব করলেন! আমরা যেটাকে অসম্ভব ভাবি, প্রজাপতিরা ঠিক সেটাই করে প্রতিদিন। প্রজাপতিরা এমনই এক অনন্য প্রাণী, যাদের স্বাদ নেবার জন্য জিহ্বা না থাকলেও তারা তাদের পা দিয়ে স্বাদ নিতে পারে। এ যেন এক প্রকৃতির নীরব বিস্ময়— যা বিজ্ঞানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে আমরা জানতে সক্ষম হয়েছি।
কেন পায়ে থাকে স্বাদের অনুভূতি?
প্রজাপতির পায়ে, বিশেষ করে সামনের জোড়ায়, থাকে বিশেষ একধরনের চেমোরিসেপ্টর (chemoreceptors)। এই ক্ষুদ্র সংবেদনশীল কোষগুলো ফুল বা গাছের পাতার রস বা রাসায়নিক পদার্থ স্পর্শ করলেই স্বাদের সংকেত পাঠায় প্রজাপতির মস্তিষ্কে। বিশেষ করে, স্ত্রী প্রজাপতির জন্য এই ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডিম দেওয়ার জন্য তাকে এমন উদ্ভিদ বেছে নিতে হয় যার পাতা তার ভবিষ্যৎ সন্তান—শুঁয়োপোকা—খেয়ে বাঁচতে পারবে। আর সেই সঠিক পাতাটি খুঁজতে প্রজাপতিরা পা দিয়ে পাতায় “ড্রামিং” করে—ছোট ছোট ধাক্কা দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করে।
মা প্রজাপতির শপিং!
ভাবুন, একজন মা খাবার দোকানে ঢুকে পা দিয়ে প্রতিটি ফল ছুঁয়ে যাচ্ছেন—কোনটা মিষ্টি, কোনটা তেতো, তা জানার জন্য। প্রজাপতিরা সেই কাজই করে প্রকৃতির বিশাল সুপারশপে। মায়ের স্বাদ-পরীক্ষার এই ক্ষমতা তার সন্তানকে সঠিক খাবার নিশ্চিতে সাহায্য করে। প্রজাপতিরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট গাছের পাতায়ই ডিম পাড়ে—যেমন, মনর্ক প্রজাপতি কেবল দুধফুল গাছে (milkweed) ডিম দেয়। ভুল গাছ মানেই বাচ্চার মৃত্যুর শঙ্কা।
কেবল পা নয়—আরো আছে!
প্রজাপতির proboscis বা লম্বা মুখনালী এবং অ্যান্টেনাতেও কিছু পরিমাণ চেমোরিসেপ্টর থাকে। তবে স্বাদ শনাক্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর স্থান হলো পা— বিশেষ করে tarsi (পায়ের নিচের অংশ)। Florida Museum-এর গবেষণা অনুযায়ী, “They do have some taste buds on their proboscis and antennae as well, but most of the taste buds are focused on their feet.”
প্রকৃতির নিখুঁত বুদ্ধিমত্তা
এই ক্ষমতা শুধু প্রজাপতির জীবনচক্র নয়, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রজাপতির নির্দিষ্ট উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীলতা “co-evolution” বা সহ-উন্নয়নের এক দৃষ্টান্ত। মানব সভ্যতার বাইরের এই সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রিত চক্রগুলো প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে নিরবেই।
প্রজাপতিরা আমাদের চোখে কেবল সুন্দর এক রঙিন পোকা— অথচ তাদের প্রতিটি অঙ্গজ ব্যবস্থার পেছনে রয়েছে বিস্ময়কর বিজ্ঞান। জিহ্বা নয়, তাদের পা-ই স্বাদ গ্রহণের প্রধান উপায়। এই সত্য আমাদের শেখায়— প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর ভিন্নতা শুধু জৈবিক বৈচিত্র্যই নয়, বরং প্রয়োজন থেকে তৈরি হওয়া চমৎকার এক অভিযোজন।