logo
ads

জলহস্তীর সমাজ: প্রাকৃতিক শাসনব্যবস্থায় রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার সংগ্রাম

যাপ্র ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৯ পি.এম
জলহস্তীর সমাজ: প্রাকৃতিক শাসনব্যবস্থায় রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার সংগ্রাম

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর বন্যজগতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের আচরণ এবং জীবনধারা মানুষকে অবাক করে। পশুরাও শুধু নিজস্ব অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচে না, তাদের অনেকের সমাজ আছে, পরিবার আছে, এমনকি দলগত নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলাও রয়েছে। জলহস্তী (hippopotamus) এই প্রজাতির মধ্যেই একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণী, যার সমাজ কাঠামো অত্যন্ত কঠোর, পুরুষতান্ত্রিক এবং সংঘাতময়। এখানে নেতৃত্ব মানেই নিঃসীম ক্ষমতা, আর এই ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে প্রাকৃতিক নিয়মেই সংঘর্ষ, সহিংসতা এবং মাঝে মাঝে আত্মীয় হত্যাও স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।

দলগত গঠন ও নেতৃত্বের ধরণ

জলহস্তীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। একেকটি দলে ৬ থেকে ১০টি সদস্য থাকতে পারে। প্রতিটি দলে একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সদস্যই হয় দলনেতা বা ‘আলফা মেল’। দলের বাকি সদস্যরা নারী জলহস্তী ও তাদের সন্তানসন্ততি। দলনেতা কেবল প্রজনন অধিকারই ভোগ করে না, একই সঙ্গে গোটা দলের ওপর তার একক নিয়ন্ত্রণ থাকে। অন্য কোনো পুরুষ সদস্য দলে প্রবেশ করতে পারে না, কারণ এটি তার একচ্ছত্র শাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ক্ষমতার উত্তরাধিকার ও সন্তান হত্যার রীতি

জলহস্তীর সমাজে নেতৃত্ব কোনো প্রথাগত উত্তরাধিকার সূত্রে চলে না। এখানে ক্ষমতা টিকে থাকে শক্তির মাধ্যমে, উত্তরাধিকার নয়। একজন ছেলে জলহস্তী যখন জন্ম নেয়, তখন থেকেই সে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে পিতা জলহস্তী অনেক সময় নিজ ছেলেসন্তানকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত থাকে।

এই আশঙ্কা থেকে মা জলহস্তী সন্তান জন্মদানের সময় দল থেকে একাকী সরে যায়। প্রসবকালীন সময়ে সে একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই সন্তান বড় করে তোলে যতক্ষণ না সে দৌড়াতে শেখে, আত্মরক্ষা করতে পারে। সন্তান যতক্ষণ দুর্বল, ততক্ষণ সে বাবার আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। যখন মা বুঝে যে সন্তান বাঁচার মতো সক্ষম, তখনই কেবল সে আবার দলে ফিরে আসে।

বিদ্রোহ, সংঘর্ষ এবং দলত্যাগ

যখন সেই ছেলে জলহস্তী প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তার মনে নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। একসময় সে বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। শুরু হয় ভয়ংকর এক রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব—যেখানে হয় বাবা মারা পড়ে, না হয় ছেলে। কেউই ছাড় দিতে চায় না, কারণ নেতৃত্ব মানেই বেঁচে থাকার গ্যারান্টি, প্রজননের অধিকার এবং দলের নারীদের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।

যদি ছেলে হেরে যায়, তবে তাকে দল ত্যাগ করতে হয়। পরাজিত পুরুষ জলহস্তী পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং হয়ত কোনোদিন নিজের একটি নতুন দল গড়ে তোলে। আবার যদি সে জয়ী হয়, তাহলে বাবাকে হয় হত্যা করে, না হয় সে নিজেই পালিয়ে যায়, এবং নতুন নেতৃত্বের সূচনা হয়।

প্রাকৃতিক নিষ্ঠুরতার গ্রহণযোগ্যতা

জলহস্তীদের সমাজে ছেলেশিশু হত্যার প্রবণতা অত্যন্ত প্রকট। এটি শুনতে নির্মম মনে হলেও, প্রাণীজগতে এটি একটি টিকে থাকার কৌশল। দুর্বল, প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নেতৃত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নেতৃত্বের স্থায়িত্বই গোটা দলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে। ফলে, ক্ষমতার রাজনীতিতে আত্মীয়তা বা সম্পর্কের কোনো স্থান নেই।

জলহস্তীদের সমাজ আমাদের দেখায় যে, প্রাণীজগতেও রাজনীতি আছে, ক্ষমতার জন্য সংঘর্ষ আছে, এমনকি আত্মত্যাগের পাশাপাশি আত্মীয় হত্যার মতো নিষ্ঠুর বাস্তবতাও আছে। এই সমাজব্যবস্থা আমাদের শেখায়—প্রকৃতির আইন ভিন্ন, সেখানে টিকে থাকার জন্য শক্তিই শেষ কথা।

dainikamarbangla

বিশেষ সংবাদ