logo
ads

রাজসাক্ষী আইজিপির জবানবন্দি: উন্মোচিত গোপন কাহিনি

যাপ্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশকাল: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৮ এ.এম
রাজসাক্ষী আইজিপির জবানবন্দি: উন্মোচিত গোপন কাহিনি

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর পরিকল্পনা, আন্দোলনকারীদের উপর মানসিক নির্যাতন, মারণাস্ত্র ব্যবহারে রাজনৈতিক নির্দেশনা—এসবসহ একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় তিনি এই তথ্য দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দির অনুলিপি আজ একটি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

সাবেক আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, "১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হতো তাদের। বৈঠকে দুজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন অর রশীদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠক থেকে সবরকম নির্দেশনা ও পরামর্শ করা হতো।"

তিনি আরও জানান, আন্দোলনের কোর কমিটির এক বৈঠকে সমন্বয়কদের গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত হয়। "সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ সমন্বয়ককে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারে তাদের মানসিক নির্যাতন ও চাপ দেওয়া হয়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বলা হয়," বলেন তিনি।

"ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে ডাকতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবচেয়ে কার্যকর মনে করা হতো তাকে,"—যোগ করেন মামুন।

আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়েও তিনি বলেন, "আন্দোলনকারীদের নজরদারি, গুলি করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির গোপন পরিকল্পনা হয়। র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।"

আরও বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে সাবেক আইজিপি বলেন, "আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার এবং আন্দোলন প্রবণ এলাকায় ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাকে লেথাল উইপেন ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন। ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ লেথাল উইপন ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন।"

তিনি আরও দাবি করেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে পরামর্শ ও উসকানি দিয়েছিলেন।

চূড়ান্ত মুহূর্তে নিজের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তাও বলেন মামুন। "৫ আগস্ট বিকেলের দিকে একটি হেলিকপ্টার আসে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে। ওই হেলিকপ্টারে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন,"—জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি।

শেষে আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হতাহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। তবে নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জবানবন্দিতে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

এদিকে, আদালতে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানালে, তা গ্রহণ করা হয়েছে।

এই জবানবন্দি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি তদন্ত ও বিচারিক পর্যায়ে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, সে দিকে এখন নজর দেশবাসীর।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

বিশেষ সংবাদ