মহান আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতরাজির মধ্যে সময় হচ্ছে অন্যতম। নিশ্চয়ই সময়, দিন-রাতের সমন্বিত রূপ। সময়ের সমষ্টিই জীবন। মানুষ তার দুনিয়ার জীবন কীভাবে অতিবাহিত করেছে আখিরাতে সে হিসাব প্রদান করতে হবে। এ কারণে, সময়ের সদ্ব্যবহারের জন্য এর যথার্থ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখেই জন্ম হয়েছে সময় ব্যবস্থাপনা পরিভাষার। ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণ, চিন্তা ও পরকালীন সুখ-সমৃদ্ধির বিষয় সামনে রেখে মানুষকে সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন, এর সদ্ব্যবহার ও ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনার নির্দেশ প্রদান করে।
আল্লাহ সময় বোঝানোর জন্য কুরআনে অনেক প্রতিশব্দ ব্যবহার করে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ বলেন ‘কালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে ডুবে আছে’। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে বহু সৃষ্টিকে নিয়ে কসম করেছেন, এতে এগুলোর মর্যাদা অনেক বেড়ে গেছে। তেমনি সময় নিয়ে কসম করায়; এটি প্রত্যেক মানুষের জন্য কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ আরও বলেন, সকালের উজ্জ্বল আলোর শপথ, রাতের শপথ যখন তা হয় শান্ত-নিঝুম। মহানবী (সা.) সময়কে গুরুত্ব দিতে এবং একে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন কোনো বান্দা চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না-সে তার জীবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে, তার সম্পদ কোথা থেকে আয় করে কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কিনা। উল্লিখিত হাদিসের চার বিষয়ই সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত- মনীষীরা সময় ব্যবস্থাপনার পাঁচটি মৌলিক উপাদান বর্ণনা করেছেন। তা হলো-
পরিকল্পনা : সময় ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান উপাদান সুষ্ঠু পরিকল্পনা। মানুষের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি কাজ সময়মাফিক ও যথাসময়ে পরিকল্পনামাফিক করলেই কেবল অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়।
শৃঙ্খলা : সময় ব্যবস্থাপনার জন্য শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিক গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ সময় হ্রাস করে। নিয়মানুবর্তিতার অপর নাম সময়ানুবর্তিতা, যা ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সচেতন করে।
নির্দেশনা : সময় ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ নির্দেশনা ও সময় মতো নির্দেশনা উভয়টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সঠিক পরিস্থিতিতে সঠিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমেই উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মানসিকতা অনুযায়ী নির্দেশনা প্রদান জরুরি। সঠিক নির্দেশনা প্রদানে বিলম্বিত হলে সময় ব্যবস্থাপনার বিঘ্ন ঘটে।
পর্যবেক্ষণ : সফলভাবে সময় ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকতার সঙ্গে সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ জরুরি।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ : সময় মতো যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কোনো বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সময় অপচয় রোধ হয়। সময় নষ্ট করার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অলসতা। অবসর সময় আমরা নষ্ট করে থাকি। সিরিয়ার একজন বিজ্ঞ ইসলামিক স্কলার বলেছেন, সুবহানাল্লাহ! যদি এদের কাছ থেকে সময় কিনে নেওয়া যেত, তাহলে অবশ্যই তা আমরা ক্রয় করে নিতাম। সময় নষ্ট করার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে জীবনে লক্ষ্য না থাকা। জীবনে লক্ষ্য না থাকার কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয়। এমনকি আমরা অনেকেই জানি না, দুনিয়াতে আমাদের কেন আগমন। সময় অপচয়ের জন্য দায়ী আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ভুল পরিকল্পনা। অনেক লোক আছে যারা নিজেই সব কাজ করে, অন্যের ওপর ভরসা করতে পারে না। তাই সে ছোট কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করে। অথচ সে পরিবারের অন্য সদস্য-ছেলে, মেয়ে বা স্ত্রীর দ্বারা সে কাজ করাতে পারত। সে এমন কাজ করবে, যে কাজটা পরিবারের অন্য সদস্যের দ্বারা সম্ভব নয়। সুতরাং, যে কাজটা অন্যের দ্বারা করানো যায় সে কাজটা আপনি করলে তা হবে ভুল পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।