logo
ads

গোপনে সংগঠিত হতে নিষিদ্ধ আওয়ামী নেতাদের অপতৎপরতা

যাপ্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশকাল: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫ এ.এম
গোপনে সংগঠিত হতে নিষিদ্ধ আওয়ামী নেতাদের অপতৎপরতা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো দাবি করছে, দেশের স্বাভাবিক অবস্থাকে ব্যাহত করে দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে গোপনে সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাংশ নেতাকর্মীরা।  তাদের মতে, এই তৎপরতার পেছনে আছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক শতাধিক গোপন গ্রুপের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, উসকানিমূলক বার্তা ও সাংগঠনিক নির্দেশনা নিয়মিত আদান-প্রদান হচ্ছে। অন্তত ৩৭টি সক্রিয় টেলিগ্রাম গ্রুপ ও ১৪টি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এই কর্মকাণ্ডের বিস্তার।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, এসব গ্রুপ থেকে সরকার, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এবং তৎপরতাগুলো শুধু দেশেই নয়, বরং পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের গোপন জাল

গোপন টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—
‘আমরা ঐক্যবদ্ধ ৬৪ জেলার বঙ্গবন্ধু সৈনিক’,
‘বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড বাংলাদেশ’,
‘ঢাকা ব্লকড (মুজিব ফোর্স)’,
‘আমরা শেখ হাসিনা ভ্যানগার্ড’,
‘ফেসলেস ডেমোক্রেসি’,
‘টিম জয়’,
‘বঙ্গবন্ধু ২৩ এভিনিউ’,
‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’,
‘বিপ্লবী সিলেট’,
‘চেতনা ৭১’,
‘মব সন্ত্রাস প্রতিরোধ’,
‘জয় বাংলা ৭১’,
‘ওমেন পাওয়ার সেন্ট্রাল’ প্রভৃতি।

হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক গ্রুপগুলোর তালিকায় রয়েছে—
‘বঙ্গবন্ধু প্রচার সেল’,
‘মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ’,
‘শেখ হাসিনার গেরিলা বাহিনী’,
‘চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু আদর্শ সৈনিক’ এবং
‘সদর উপজেলা কৃষক লীগ প্রচার সেল’।

বিদেশে বসেই অর্থায়ন ও নির্দেশনা

এই ডিজিটাল তৎপরতার পেছনে আর্থিক ও সাংগঠনিক সহায়তা দিচ্ছেন প্রবাসী আওয়ামী নেতারা। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, লন্ডন, দুবাই ও মালয়েশিয়ায় বসে পরিচালিত হচ্ছে এসব গ্রুপের প্রশাসনিক কার্যক্রম।

‘সাপোর্ট জয়বাংলা’ নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের ভয়েস বার্তায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতা আহাদ চৌধুরী বলেন—
“আমরা মৌলভীবাজারে নিপীড়িত আওয়ামী পরিবারের পাশে আছি। ড. ইউনূস আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।”

তিনি আরও দাবি করেন,
“এই গ্রুপে অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমএ রহিম সিআইপি, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সাইফুর রহমান বাবুল এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা জহির কাজী জহির।”

আহাদ চৌধুরী এক পর্যায়ে বলেন—
“শেখ হাসিনা নিজেও একবার আমাদের একটি অনলাইন সভায় যুক্ত ছিলেন, যেখানে ১২৯ জন সদস্য অংশ নেন।”

আরও বলেন,
“যারা আগে ক্ষমতায় থাকাকালে আত্মীয়স্বজনকে পদ দিয়ে মানুষের জায়গা-জমি দখল করেছিল, তারা আজ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কর্মীরাই এখন ত্যাগ স্বীকার করছেন।”

সাইবার নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন—
“সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে এসব গ্রুপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক সদস্যকে শনাক্ত করা গেছে। প্রযুক্তিগত সহায়তায় তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ চলছে।”

তিনি আরও জানান—
“যদিও এই নিষিদ্ধ গোষ্ঠী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৎপরতা চালাচ্ছে, আমরা উন্নত সাইবার টুল ও গোয়েন্দা ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছি। দেশের বাইরে যারা এই কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

পুলিশ সুপার মনে করেন—
“পূর্ববর্তী সরকারের সময় যারা দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল, তারাই এখন নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা এসব চক্রান্ত রুখতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।”

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার প্রবণতা নতুন নয়, তবে এখন তা অনেক সময় রাষ্ট্রবিরোধী রূপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—এই ধরনের কার্যকলাপ প্রতিরোধে সরকারের প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা কাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ