logo
ads

৯ ঘন্টা পর মাইলস্টোনে আটকে থাকা অবস্থা থেকে মুক্ত হলেন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০ পি.এম
৯ ঘন্টা পর মাইলস্টোনে আটকে থাকা অবস্থা থেকে মুক্ত হলেন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব

ছবি: সংগৃহীত

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দীর্ঘ ৯ ঘন্টা আটকে থাকার পর অবশেষে পুলিশি পাহারায় সেখান থেকে বের হতে পেরেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবস্থান করতে বাধ্য হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ওই সময় বাইরে চলছিল উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ।

বিকেলে তাঁরা একবার কলেজ ত্যাগের চেষ্টা করেন, তবে দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীদের বাধায় আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এরপর তাঁরা একাডেমিক ভবন-৭–এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন। তাঁদের গাড়ি ক্যাম্পাসের ভেতরে রাখা হয় এবং ভবন-৭ ও ভবন-৫ এলাকায় পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ও তৎপরতা বাড়ে। তখন উপদেষ্টা ও প্রেস উইংয়ের সদস্যরা নিচে নামেন এবং সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে গাড়িবহরসহ কলেজ ত্যাগ করেন। তাঁরা দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোর দিক দিয়ে এলাকা ছাড়েন।

এর আগের দিন, সোমবার, কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে ৩১ জন প্রাণ হারান এবং আহত হন ১৬৫ জন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, যারা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। উদ্ধারকাজ চলাকালে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করে। তবে সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে মাইকিং করে জানানো হয় যে, “সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা অবস্থান নিষিদ্ধ”। ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরে এবং বিক্ষোভ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছয়টি দাবি তোলে, যার মধ্যে রয়েছে—নিহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ, আহতদের নির্ভুল তালিকা, ক্ষতিপূরণ, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল, নিরাপদ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিয়ে ক্ষমা চাওয়া।

পরবর্তীতে উপদেষ্টারা ভবন-৫–এর নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান এবং সেখানে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাইরে তখনও শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছিল।

আলোচনা শেষে বেলা পৌনে একটার দিকে উপদেষ্টারা কক্ষ থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন।” তিনি আরও বলেন, “অভিভাবক হিসেবে ভালোবাসা জানাতে এসেছেন।”

সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়, “শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রতিটিই যৌক্তিক।” তবে আশ্বাস সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়। ফলে উপদেষ্টারা আবার ভবনের ভেতরে ফিরে যান।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা আবার বের হয়ে আসেন। সে সময় শিক্ষার্থীদের দেখা না গেলেও, বিকেল পৌনে চারটার দিকে দিয়াবাড়ি মোড়ে উপদেষ্টাদের গাড়ি পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রতিবাদ করে এবং “আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ” দাবি করে স্লোগান দেন। বাধার মুখে তাঁরা পুনরায় কলেজ ভবনে ফিরে গিয়ে অবস্থান নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ