২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্তভাবে শুরু করেছে।
দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, একটি মহল সচেতনভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন ঠেকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বলছেন, দেশে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক চোরাচালান ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে বিএনপি। একইসঙ্গে, এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, “যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, জাতীয় নির্বাচন আর পেছানো যাবে না। নির্বাচন পেছালে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। জনগণ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছে।”
দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ঐকমত্য হলেও নির্বাচন কমিশনের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি। ফলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করতে এবং নির্বাচন পিছিয়ে দিতে উদ্দেশ্যমূলক অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।
দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সে জন্য প্রার্থী নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। দলীয় গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হবে। বিশেষ করে, যারা ৫ আগস্টের পর দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন কিংবা সরকার আমলে নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
বিএনপি এককভাবে না জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে—সে বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সংলাপ শুরু হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা থাকলেও জোটের কাঠামো এখনো নির্ধারিত হয়নি। একইসঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা চলছে।
দলকে সংগঠিত করা, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ইশতেহার প্রণয়ন এবং প্রচার কৌশল নির্ধারণসহ নির্বাচনী প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় চলছে এ প্রস্তুতি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে, যাতে দেখানো যায় দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন বিলম্বিত করা। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। এর জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”
তবে বিএনপির অভিমত, এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ‘জুলাই সনদ’ বা নির্দিষ্ট নির্বাচনী রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়নি। এ অনিশ্চয়তা জনমনে উদ্বেগ ও সংশয় তৈরি করেছে, যা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।