logo
ads

মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা এসি গাড়িতে করে কারাগারে

যাপ্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশকাল: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৪ পি.এম
মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা এসি গাড়িতে করে কারাগারে

ছবি: সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি পৃথক মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কারা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। “বাংলাদেশ জেল–প্রিজন ভ্যান” লেখা সবুজ রঙের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে তাদের কারাগারে নেওয়া হয়।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানান, “১৫ সেনা কর্মকর্তা সেনানিবাসে বাশার রোডের সাব-জেলেই থাকবেন।” তিনি আরও বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার সাব-জেলটির তদারকি করবেন এবং সার্বক্ষণিক একজন ডেপুটি জেলার ডিউটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ইতোমধ্যে সেখানে নিয়োজিত হয়েছেন। আইজি প্রিজন্সের ভাষ্য, “কারাবিধি অনুযায়ী অন্যান্য ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের মতোই সুবিধা পাবেন এখানকার বন্দিরা।”

তিনি আরও জানান, আসামিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আধুনিক গাড়ি চাওয়া হয়েছিল। “এ কারণে আমরা পুলিশকে ওই গাড়িটি দিয়েছি,” বলেন আইজি প্রিজন্স। তার তথ্য অনুযায়ী, কারা অধিদপ্তরের এমন ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি আছে, যা সাধারণত প্রতি শুক্র ও শনিবার কাশিমপুর থেকে ভিআইপি বন্দিদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন বলেন, “আদালত থেকে তাদের সেনানিবাসের সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তারা থাকবেন।”

বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আদালতের আদেশ অনুযায়ী তাদের ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডে অবস্থিত সাব-জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সবুজ রঙের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রিজন ভ্যানে করে অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। তারা তখন সাধারণ পোশাকে ছিলেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।

এদিকে আদালতে যাতায়াতে ব্যবহৃত বিলাসবহুল গাড়িটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো আসামিকে কারা হেফাজতে হস্তান্তরের পরই সে কারা অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পায়। কিন্তু বুধবার আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আগেই আধুনিক গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “আসামিদের আমাদের হেফাজতে আদালতে এবং আদালত থেকে সাব-জেলে নেওয়া হয়েছে। তবে গাড়িটি আমাদের না। আসামিরা ভিআইপি বিবেচনায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই গাড়িটি নেওয়া হয়েছে।”

কারা সূত্র জানিয়েছে, সাব-জেলে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার জন্য তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকালের মেন্যুতে রয়েছে রুটি ও সবজি, দুপুরে ডাল, ভাত, সবজি ও মাছ বা মাংস, আর রাতে মাছ বা মাংসের সঙ্গে সবজি দেওয়া হবে। তাদের কক্ষে একটি বিছানা, চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ও পত্রিকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া তাদের জন্য চা পানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ও জেলার বসেই সাব-জেলের তদারকি করবেন। সেখানে দায়িত্বে থাকবেন তিনজন ডেপুটি জেলার, যারা তিন শিফটে কাজ করবেন। তবে তারা স্থায়ী নন, “কয়েকদিন পরপর তাদের পরিবর্তন করা হবে।”

এআইজি (প্রিজন্স) জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, “বুধবার আমরা আসামিদের পুলিশের কাছ থেকে বুঝে পেয়েছি। আসামিরা এখন আমাদের অধীন সাব-জেলে আছেন।” তিনি আরও জানান, পরবর্তী সময়ে আদালতে হাজিরার সময় পুলিশ হেফাজতে তাদের আদালতে নেওয়া হবে এবং পরে আবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারাবিধি অনুযায়ী তাদের খাওয়াদাওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করছে কারা কর্তৃপক্ষ।”

তিন মামলায় মোট ৩২ জন আসামি রয়েছেন, এর মধ্যে ২৫ জনই সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। ১১ অক্টোবর সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, “যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।” পরদিন, ১২ অক্টোবর, ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ