অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ নিজের কাছে থাকার দাবি করলেও, তা ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, কারও অসদাচরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকলে তা যথাযথ আইনগত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সরকারের এই অবস্থান প্রকাশ পায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে যেখানে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এ বি এম আবদুস সাত্তার নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। আবদুস সাত্তার বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমরা এ অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রমাণ উপস্থাপন বা ব্যক্তিদের শনাক্ত না করে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জনআস্থার জন্য ক্ষতিকর।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমাদের প্রশাসন স্বচ্ছতা, সততা এবং জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আব্দুস সাত্তারের কাছে কোনো অসদাচরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকে, আমরা তাকে যথাযথ আইনগত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তা দ্রুত জমা দেওয়ার আহ্বান জানাই।”
সঙ্গে যোগ করা হয়, “যতক্ষণ না এমন প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে, আমরা সব অংশীজনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জনপরিসরের আলোচনা অনুমান নয়, বরং তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া সমীচীন।”
গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন এ বি এম আবদুস সাত্তার।
বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও প্রমাণ আছে। উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না।”
তিনি আরও জানান, “আমি এখানে বক্তব্যের শুরুতে দুটি ঘটনা বলবো। একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি); তিনি একটি স্কুলের জমির নামজারির ৩০ লাখ টাকা চেয়েছেন। আরেকটি ঘটনা, ঢাকার আশেপাশেরই। একজন ইউএনও একটি কারখানার ‘লে আউট’ পাস করতে ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন।”
তার ভাষ্য, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুথানের পর দুর্নীতির পথে আর সবাই হাঁটবে না। এটাই তো আশা ছিল সবার। কিন্তু এখন কি হচ্ছে, গত এক বছরে অতীতের দুর্নীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।”
দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করে সাবেক এই সচিব বলেন, “আমার প্রশ্ন যে উপদেষ্টার পিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা মিডিয়াতে এসেছে। তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না? এই সরকার নিয়ে একটা কথা বাইরে প্রচলন আছে যে এই সরকার ‘বৈদেশিক সরকার’। এই সরকার ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সরকার’, ‘চিটাগং সমিতির সরকার’।"
প্রধান উপদেষ্টা জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমার একটাই অনুরোধ ইউনুস সাহেবের প্রতি আমি তার ভক্ত। তার সাফল্য কামনা করি। কী হচ্ছে ইউনুস সাহেব জানেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। হতাশার কথা বললাম এই কারণে, এই জায়গা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমি খুবই হতাশ।”