দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত জুলাই বিপ্লবপন্থী ২০ জন সাংবাদিককে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় পত্রিকাটির অভ্যন্তরে চরম উত্তেজনা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পত্রিকাটির বাকি সাংবাদিকরা একত্র হয়ে সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে জনকণ্ঠ পত্রিকার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়, কীভাবে সম্পাদকীয় পক্ষপাত ও মতাদর্শগত মতপার্থক্য সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়নের রূপ নিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আগস্ট উপলক্ষে স্বৈরাচারের দোসর জনকণ্ঠ পত্রিকা গতকাল কালো রঙ ধারণ করেছিল। তার প্রতিবাদে আমরা লাল রঙ দিয়ে আজ পত্রিকাটি বের করার কারণে জুলাই বিপ্লবের পক্ষে থাকা সকল সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করেছে পত্রিকাটির সম্পাদক শামিমা এ খান।” এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত করা হয় যে, জাতীয় ইতিহাসের কিছু বিতর্কিত অধ্যায়—বিশেষ করে ‘জুলাই বিপ্লব’ এবং ‘আগস্ট ট্র্যাজেডি’ নিয়ে জনকণ্ঠ পত্রিকার ভেতরে মতপার্থক্য গভীর আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি পত্রিকাটি আগস্ট মাস উপলক্ষে একটি কালো সংখ্যার আয়োজন করেছিল, যেটি কিছু সাংবাদিকের কাছে বিতর্কিত ও একতরফা মনে হয়। এর প্রতিবাদ হিসেবে লাল রঙের মাধ্যমে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করলে সম্পাদকীয় দপ্তর কড়া অবস্থান নেয় এবং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করে। ফেসবুক পোস্টে আরও বলা হয়, “এই বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জনকণ্ঠের সকল কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা করছি। এরপরও যদি কেউ দায়িত্ব নিয়ে পত্রিকা বের করেন তাহলে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে বের করবেন।”
জনকণ্ঠের দীর্ঘদিনের পাঠক ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ ধরনের সম্পাদনা-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব দেশীয় গণমাধ্যমের জন্য অশনি সংকেত। স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, তা যদি সংবাদপত্রের ভেতরেই বাধাগ্রস্ত হয়—তবে তা উদ্বেগজনক। অন্যদিকে, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বা সম্পাদক শামিমা এ খানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে ঘটনার একপাক্ষিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। তবে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শ ও অবস্থানের পক্ষে ব্যক্তিগত বিবৃতি দিয়েছেন।
জনকণ্ঠ আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী দিনের পত্রিকাটি প্রকাশিত হবে কি না, কিংবা সংকট কাটিয়ে উঠতে কোনো আলোচনা বা সমঝোতা হবে কি না—তা এখনো অনিশ্চিত। গণমাধ্যম জগতের অনেকেই মনে করছেন, মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ও প্রতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব এখন অনেক পত্রিকার অস্থিরতার মূল কারণ হয়ে উঠেছে। জনকণ্ঠের ঘটনাও হয়তো সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।