logo
ads

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ৯

যাপ্র আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশকাল: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০২:১৭ পি.এম
থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ৯

ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান সীমান্ত বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার ভোরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এ সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এছাড়াও এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন।

বিভিন্ন প্রদেশে হতাহতের ঘটনা

থাই সেনাবাহিনী রয়েল থাই আর্মির এক বিবৃতিতে জানায়, এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তিনটি ভিন্ন প্রদেশে। সংঘর্ষের জেরে সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

থাইল্যান্ডের অভিযোগ

থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে কাম্বোডিয়ান বাহিনী থাই সেনাঘাঁটিতে ভারী আর্টিলারি নিক্ষেপ করে। এমনকি তারা একটি হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকাও লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যার ফলে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

সুরিন প্রদেশে একটি আর্টিলারি শেল ঘরবাড়ির ওপর পড়ে, এতে ৮ বছর বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায় বলে জানান কাবচিয়াং জেলার প্রধান সুত্থিরোট চারোয়েনথানাসাক। তিনি আরও বলেন, “৮৬টি গ্রামের ৪০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে একটি গ্যাস স্টেশনে আগুন ধরে যায়, যেখানে ৬ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হন। ইউবন রাচাথানি সীমান্ত প্রদেশে আরও একজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী।

থাই বিমান হামলা

থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জবাবে তারা ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে কাম্বোডিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। থাই সেনাবাহিনীর উপ-প্রবক্তা রিচা সুকসুয়ানন বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সামরিক টার্গেটে বিমান হামলা করেছি।”

দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

উভয় দেশই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, “থাই যুদ্ধবিমান দুটি বোমা একটি রাস্তার ওপর ফেলেছে, যা পুরোপুরি ‘উসকানিমূলক ও বর্বর আগ্রাসন’। তারা থাইল্যান্ডকে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য কঠোরভাবে দোষারোপ করেছে।

অন্যদিকে, থাইল্যান্ড দাবি করেছে, সংঘর্ষের আগে কাম্বোডিয়া একটি নজরদারি ড্রোন পাঠায় এবং এরপর ভারী অস্ত্রসহ সৈন্য মোতায়েন করে। এ ঘটনায় দুই থাই সেনা আহত হন।

থাই সেনাবাহিনী আরও অভিযোগ করেছে, কাম্বোডিয়ার বাহিনী রকেট লঞ্চারসহ একাধিক ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

জাতিসংঘে হস্তক্ষেপ চাইলেন কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী

কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের জাতিসংঘ দূত আসিম ইফতিখার আহমাদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, “থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক আগ্রাসন এ অঞ্চলের শান্তিকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমি নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি বৈঠক আহ্বানের অনুরোধ করছি, যাতে থাইল্যান্ডের আগ্রাসন থামানো যায়।”

চিঠিটি তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন।

কূটনৈতিক সংকটও বেড়েছে

এই সংঘর্ষের আগে থাইল্যান্ড তার রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনে এবং ব্যাংককে নিযুক্ত কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়।

পেছনের প্রেক্ষাপট

থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২০১১ সালেও দুই দেশের মধ্যে এক সপ্তাহব্যাপী গোলাগুলিতে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

চলতি বছর মে মাসে এক কাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়, যা কূটনৈতিক টানাপোড়েন থেকে সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়। সর্বশেষ ১৬ জুলাই থাইল্যান্ডে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে একজন সেনা আহত হন, যার পা কেটে ফেলতে হয়। একই এলাকায় আরেকটি বিস্ফোরণে আরও তিনজন থাই সেনা আহত হন, যার মধ্যে একজন তার পা হারান।

এই বিভাগের আরও খবর

dainikamarbangla

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ