সম্প্রতি বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনায় মুসলিম নারীদের টার্গেট করে প্রতারণা, নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগ উঠছে। ভোলায় মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করে অর্থ আত্মসাৎ, গাজীপুরে ১৩ বছরের এক কিশোরীর ওপর দীর্ঘদিনের নির্যাতন, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিকৃত যৌন বর্ণনা, এবং টঙ্গির এক মসজিদের খতিবকে অপহরণের পর পঞ্চগড়ে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের মতো ঘটনায় জনমনে নতুন প্রশ্ন উঠেছে—এসব কি কেবল বিচ্ছিন্ন অপরাধ, নাকি কোনো সংগঠিত সাম্প্রদায়িক পরিকল্পনার অংশ?
স্থানীয় সূত্র ও কিছু পর্যবেক্ষকের দাবি, একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ‘ভাগোয়া লাভ ট্র্যাপ’ বা ‘গেরুয়া প্রেমের ফাঁদ’ নামে একটি সংগঠিত কৌশলের মাধ্যমে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করছে। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র প্রেমের সম্পর্ক নয়, বরং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যৌন সহিংসতার এক রূপ, যার লক্ষ্য মুসলিম নারীদের মানহানি, ধর্মান্তর বা পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে ফেলা।
অপহৃত খতিবের অভিযোগ, তিনি মসজিদে ইসকন ও ‘লাভ ট্র্যাপ’ বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই হুমকি পেতে থাকেন। তাঁর দাবি, ইসকন নেতাদের পক্ষে অবস্থান নিতে অস্বীকার করায় তাঁকে অপহরণ করা হয়। পুলিশ জানায়, ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ধর্মীয় পরিচয়ভিত্তিক অপরাধের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় অসামঞ্জস্য দেখা যায়। কোনো মুসলিম অভিযুক্ত হলে দ্রুত জনরোষ তৈরি হয়, কিন্তু অন্য সম্প্রদায়ের কেউ জড়িত থাকলে অনেক সময় নীরবতা বা সংযম লক্ষ্য করা যায়—যা সন্দেহ ও বিভাজনকে উস্কে দেয়।
গাজীপুরের কিশোরী নির্যাতনের ঘটনাতেও এমন প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, দুই মাস ধরে নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর ‘সম্মতি’ দেখিয়ে ঘটনাকে প্রেমের সম্পর্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করতে পারে। অন্যদিকে, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি নিষিদ্ধ একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে সহপাঠী এক নারীর ধর্ষণ ও বিকৃত যৌনাচারের বর্ণনা দেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের বিকৃত আচরণ সমাজে বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতার প্রতিফলন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু হিন্দুত্ববাদী গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশটে মুসলিম নারীদের নিয়ে অশালীন ও ঘৃণাত্মক মন্তব্য পাওয়া গেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এমন মানসিকতা শুধু নারী নির্যাতন নয়, বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপরও সরাসরি আঘাত হানছে।
আইনবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি। যদি সংগঠিত নেটওয়ার্কের প্রমাণ মেলে, তা দেশের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একইসঙ্গে তাঁরা সতর্ক করেছেন, অপ্রমাণিত গুজব বা উসকানিমূলক প্রচারণাও যেন নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি না করে—সে বিষয়েও সজাগ থাকা প্রয়োজন।