জানা গেছে, ওই কিশোরের নামে একটি এআই-জেনারেটেড নগ্ন ছবি তৈরি করে সাইবার চক্রটি তার কাছে ৩ হাজার ডলার দাবি করে। মানসিক চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত কিশোরটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এই ঘটনাই নতুন করে সামনে এনেছে ‘সেক্সটর্শন’ নামের ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলের ভয়াবহ বিস্তার। সাধারণত অনলাইনে অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিওর ভয় দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ বা সুবিধা আদায়কে সেক্সটর্শন বলা হয়। তবে এখন সাইবার চক্রগুলো আর বাস্তব ছবি ব্যবহার করছে না, বরং জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে যে কারো ভুয়া নগ্ন ছবি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, বিশেষ করে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেরা এসব ব্ল্যাকমেইলের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। নগ্ন ছবি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ‘নুডিফাই’ অ্যাপ, যেগুলো ডিজিটালি জামাকাপড় মুছে দিয়ে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম। শুরুতে এসব অ্যাপ মূলত সেলিব্রিটিদের লক্ষ্যবস্তু করলেও এখন স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও শিকার হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংগঠন ‘ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (আইডাব্লিউএফ)’ জানিয়েছে, এসব ছবি বাস্তবের মতোই ভয়ঙ্কর। তাদের ভাষায়, “অনেক ক্ষেত্রেই আসল কোনো ছবির দরকার হয় না—এআই-ই যথেষ্ট।” সংগঠনটি এমনকি একটি ‘পেডোফাইল গাইড’ শনাক্ত করেছে, যেখানে কিশোরীদের ব্ল্যাকমেইল করতে নুডিফাই টুল ব্যবহারের বিস্তারিত কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিকেটর’-এর হিসাবে, এ ধরনের ৮৫টি সাইটের বার্ষিক বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। মাত্র ছয় মাসে এর মধ্যে ১৮টি সাইট ২.৬ মিলিয়ন থেকে ১৮.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এসব সাইট অনেক সময় গুগল, অ্যামাজন ও ক্লাউডফ্লেয়ারের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সেবাও ব্যবহার করছে।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই এআই-নির্ভর যৌনচিত্র তৈরি ও প্রচারকে ফৌজদারি অপরাধ ঘোষণা করেছে, যেখানে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ সই করেন। এর আওতায় ব্যক্তিগত অনুমতি ছাড়া ছবি তৈরি বা প্রচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং দ্রুত অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে।
এদিকে মেটা (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) হংকংভিত্তিক ‘ক্রাশ এআই’ নামের একটি নুডিফাই অ্যাপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যারা নিয়ম ভেঙে মেটার প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন চালাচ্ছিল। একইসঙ্গে স্পেনের এক জরিপে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—প্রতি পাঁচজন তরুণের একজন এআই-ডিপফেক পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছেন। এমনকি ২০২৫ সালের শুরুতে দেশটির একটি স্কুলে তিন কিশোর তাদের সহপাঠী ও শিক্ষকদের ভুয়া ছবি তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এআই প্রযুক্তির এ ধরনের অপব্যবহার শিশু-কিশোরদের সুরক্ষার জন্য এক বৈশ্বিক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি এটি শিশুদের জন্য এক নতুন সংকট তৈরি করছে।