১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৩ পি.এম

হাসিনা-ইনুর ফোনালাপ: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে, হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করা হবে

হাসিনা-ইনুর ফোনালাপ: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে, হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করা হবে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন নিয়ে হওয়া এই ফোনালাপে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া ও ছত্রীসেনা নামানোর মতো নির্দেশনার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

রোববার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে অডিওটি প্রকাশ করলে দ্রুত তা ভাইরাল হয়। ‘আমার দেশ’ জানায়, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা অডিওটি পরীক্ষা করে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সংস্থার দাবি, এটি শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর মধ্যে হওয়া ফোনালাপ।

৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই রেকর্ডিংয়ে ইনুকে বলতে শোনা যায়, “আপনার ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে। আপনি একটু দয়া করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন সবাইকে। তাহলে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।”

এতে শেখ হাসিনা জবাব দেন, “যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়ায় আন্দোলনকারীরা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। সেখানে অনেকগুলো মাদ্রাসা আছে। নারায়ণগঞ্জের মাদ্রাসার ছাত্ররা শনির আখড়ায় আর্মিকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই আমরা আকাশ থেকে ছত্রীসেনা নামাচ্ছি। আমি বলে দিয়েছি, হেলিকপ্টার থেকে ছত্রীসেনা নামাতে। আপনারা এ ম্যাসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।”

ইনুর প্রস্তাব ছিল, “হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেন্ডে মারলে তারা আর টিকতে পারবে না। কারফিউ টা উঠে গেলেও যাতে তারা আর নামতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে।”

শেখ হাসিনা তখন বলেন, “দেখি তারা কতটুকু করতে পারে। আমিও বলে দিয়েছি, র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করতে।”

কথোপকথনে ইন্টারনেট চালুর প্রসঙ্গও ওঠে। ইনু বলেন, “ইন্টারনেট চালু করতে বলেন। এটা আমাদেরই কাজে লাগবে। কারণ, আমরাও সমস্যা পড়ছি। যদি ইন্টারনেট থাকে, তাহলে নিউজ দিয়ে মিডিয়া ফ্ল্যাড করে দিতে পারব।”
তখন শেখ হাসিনা বলেন, “কীভাবে ইন্টারনেট চালু করব? ওরা ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেট আমি আর চালু করতে পারব না। অন্য সরকার এসে করলে চালু করবে।”
এতে ইনু হেসে জবাব দেন, “বাংলাদেশে আর অন্য সরকার আসবে না।”

এছাড়া জামায়াত-শিবির প্রসঙ্গ টেনে ইনু বলেন,
“জামায়াত-শিবির আবারও এক্সপোজড হইছে। এই সুযোগে তাদের মেরুদণ্ড মেরুদণ্ড ভেঙে দেন।” তালিকা করে ধরার পরামর্শে শেখ হাসিনা সম্মতিও দেন।

এর আগে শেখ হাসিনার আরও কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে তার আলাপ ফাঁস হয়, যেখানে ইনান বলেন, “অধিকাংশই ফাঁকা হইছে। তবে এরপরও ভিতরে পুলিশের কাজ করতে হবে।”

বিবিসিও সম্প্রতি একটি ফোনালাপ প্রকাশ করে, যেখানে শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন—“প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” এবং “তারা (নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, গুলি করবে।”

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইয়ারশট’-এর বিশেষজ্ঞরা অডিওটি পরীক্ষা করে জানায়, এতে কোনো এডিট বা কৃত্রিমতার প্রমাণ নেই। ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন—“রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”