১৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:১০ এ.এম

ঢাবি ছাত্রাবাসে গাঁজা সেবন করায় আটক ৪ শিক্ষার্থী

ঢাবি ছাত্রাবাসে গাঁজা সেবন করায় আটক ৪ শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় প্রথমবর্ষের চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আটককৃতদের মধ্যে একজন ছাত্রদলের কর্মী বলে অভিযোগ উঠেছে। তাকে ছাড়িয়ে নিতে প্রক্টর অফিসে গিয়েছিলেন স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মাহদীজ্জামান জ্যোতি। যদিও প্রশাসন এবং ওই নেতা দুজনেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে আটককৃতদের পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার বিবরণ

শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে শেখ মুজিবুর রহমান হলের পুরাতন ভবনের ১০৩ নম্বর কক্ষে এই চার শিক্ষার্থীকে গাঁজা সেবন করার সময় হাতেনাতে আটক করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং অন্যান্য আবাসিক শিক্ষকরা। আটককৃত শিক্ষার্থীরা হলেন: বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের আরিফ ফয়সাল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মো. সোহেল রানা, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মো. রুহুল আমিন এবং ছাপচিত্র বিভাগের ইয়ালিদ বিন সাদ। তারা সবাই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, আটককৃত চারজনের মধ্যে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ ফয়সাল ছিলেন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তার মুচলেকায় তিনি নিজেকে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলেও, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে ছাত্রদলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে নিয়মিত ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে পোস্ট দেখা যায়।

ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিযোগ উঠেছে, আটককৃত এই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনতে প্রক্টর অফিসে গিয়েছিলেন স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতি। তিনি ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের আপন ছোট ভাই। অভিযোগ অনুযায়ী, জ্যোতি মুখে মাস্ক পরে সহকারী প্রক্টরের রুমে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন সিনিয়র সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে সহকারী প্রক্টরের রুমে অভিযুক্ত, হাউজ টিউটর এবং সংশ্লিষ্ট কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। “এর কিছুক্ষণ পর স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতিকে সহকারী প্রক্টরের রুমে প্রবেশ করতে এবং ১০ মিনিটের মতো অবস্থান করতে দেখা যায়,” ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন। তিনি আরও জানান, জ্যোতি বেরিয়ে এসে বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন।

প্রশাসন ও ছাত্রদল নেতার বক্তব্য

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহদীজ্জামান জ্যোতি বলেন, “আমি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে হলের দিকে যাচ্ছিলাম। তারপর প্রক্টর অফিসের সামনে কিছু পরিচিত ছোট ভাইদের দেখতে পেয়ে তাদের দিকে যাই এবং প্রক্টর অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখি কাদের আটক করা হয়েছে। তারপর সাথে সাথেই আমি চলে আসি। এই ব্যাপার নিয়ে প্রশাসনের সাথে আমার কোনো কথা‌ই হয়নি।” তিনি আরও বলেন যে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই বোঝা যাবে তিনি কতক্ষণ সেখানে ছিলেন। মুখে মাস্ক পরার বিষয়ে তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ থাকায় তিনি মাস্ক পরেছিলেন।

এ বিষয়ে ঢাবির সহকারী প্রক্টর ড. মো. মিরাজ কোবাদ চৌধুরী বলেন, “এখানে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সাথে ওপেন আলোচনা হয়েছে। কেউ এখানে দলীয় পরিচয় দিয়ে সুপারিশ করতে আসেনি। কারো সাথে আমাদের আলাদা করে আলোচনাও হয়নি। যেহেতু তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাই মানবিক বিবেচনায় তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের নজরে রাখবো।”

আটককৃতদের পরিবারকে অবহিত না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।