১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১১ এ.এম

কাজ বাকি ৩০ শতাংশ, অথচ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত বেবিচকের

কাজ বাকি ৩০ শতাংশ, অথচ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত বেবিচকের

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখনও পুরোপুরি প্রস্তত না হলেও সেখানে ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। 

বিমানবন্দরটির ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ এখনও বাকি। টার্মিনাল ভবনকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এখনো ছাদের ব্রকশিট বসানো হয়নি। রানওয়েতে মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছে কুকুর ও গরু। সীমানা নিয়ে চলছে ‘বিশাল বিরোধ’। ঝিনুক মার্কেট সরানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই, আর কবে সরানো যাবে সেটাও কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না।

যা থাকার কথা একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে—তার অনেক কিছুই এখানে এখনো অনুপস্থিত। তবুও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২ অক্টোবর থেকেই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু হবে। এ লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইন্সকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)-কেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের নতুন নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও আপাতত বর্তমান নামেই উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আইকাও-এর নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিতে হয়। বাংলাদেশ সরকার সেই গাইডলাইন মেনেই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা দিয়েছে। এই স্বীকৃতির জন্য গত ৭ আগস্ট আইকাওকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

বিমানবন্দরটির উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। পরে ২০১৫ সালে যুক্ত হয় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নতুন ধাপ। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে সাগরপাড়ের এই বিমানবন্দরকে শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রি-ফুয়েলিং ও টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার। এ জন্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ফুট থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৭০০ ফুট করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুটই সমুদ্রের ভেতরে—যা দেশে প্রথমবারের মতো সাগরের পানির মধ্যে ব্লক বসিয়ে নির্মিত হচ্ছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর কক্সবাজার হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর জন্য বেবিচক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিক দফায় বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাকি থাকা কাজের তালিকা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক বেবিচক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা চাচ্ছিলাম ডিসেম্বর বা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আগেই ফ্লাইট চালু করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। তারা সরকারের হাইকমান্ডকে বুঝাচ্ছে দ্রুত উদ্বোধন করতে পারলে সুনাম বেশি হবে। কিন্তু এখনো যে পরিমাণ কাজ বাকি আছে তাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বলা দুষ্কর হবে।"

তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকারও জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি থার্ড টার্মিনালের ‘শফট ওপেনিং’ উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।"

ওই কর্মকর্তা জানান, "আগামি সপ্তাহে (রবি বা সোমবার) উপদেষ্টা, বেবিচক চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা বিমানবন্দরের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার যাবেন। আগামি ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এই জন্য প্রায় সব এয়ারলাইন্সগুলোকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।"