পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সোনারঘোপ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
৪ আগস্ট সোমবার বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ঝোলানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোন্দকার জসিম আহমেদ।
এই বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে শামীমা ইয়াছমিন বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো কোনো অন্যায় নয় বরং এটি তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোকে আমি গর্বের বিষয় মনে করি।”
এ ঘটনায় বেশিরভাগ মানুষ প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন, তবে অল্প কিছু মানুষের অভিমত- এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মানুষ ওই শিক্ষিকাকে “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর” হিসেবেও মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার মোবাইল নম্বরে কল করা হলে ফোন ধরেন তার স্বামী মো. হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, “সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার একটা চিঠি আছে, অফিসে এসে নিয়ে যাবেন। তবে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি।”
নেছারাবাদ শিক্ষা অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার জসিম আহমেদ জানান, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে একটি তদন্ত পরিচালনা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাষায়, তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং “দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় মামলা এবং স্থায়ী বহিষ্কারের ব্যবস্থাও হতে পারে।”
৩ আগস্ট বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে আমার পিতা মইনউদ্দীন মাস্টার মুক্তিযুদ্ধে করেছেন। সেই যুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হত না। তাই আমার বিদ্যালয় থেকে এই ছবি সরাতে পারবো না।”
তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় চাপের মুখে তিনি ছবিটি সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু হলে, প্রাথমিক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।