৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৯ এ.এম

সরকার ১২টি গণমাধ্যম সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

সরকার ১২টি গণমাধ্যম সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ১২টি সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সরকার কাজ করছে এবং চলতি আগস্টের মধ্যে এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে।

রোববার (৩ আগস্ট) রাজধানীর তথ্য ভবনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার এবং আহত ও সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

সাংবাদিকদের সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, “অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। অধ্যাদেশে সাংবাদিকতার পরিধি নিয়েও একটি বিতর্ক আছে। সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।”

নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের সঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হঠাৎ করে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়—সে বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে।”

সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের যদি সম্মানজনক জীবন দেওয়া যায়, তাহলে তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ ছেড়ে দেওয়ার একটি সুযোগ থাকবে।”

তিনি সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা আরও বলেন, “গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের মালিকানার ভাগ দেওয়া যায় কি না—সে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি করা সম্ভব হলে সাংবাদিকরা ক্ষমতায়িত হবেন এবং মালিক ও সাংবাদিকদের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।”

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনার জন্য সরকার সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ওটিটি ও অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় কিছু সংবাদপত্র নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। তবে কারফিউ চলাকালীন কিছু টেলিভিশনের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতমূলক।”

গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অভ্যুত্থান চলাকালীন অনেকে মোবাইল ফোন দিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন এবং একই সঙ্গে অভ্যুত্থানেও অংশ নিয়েছেন।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফটো সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করে উপদেষ্টা বলেন, “তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ছবি তুলেছেন। যেসব ছবি দেখলে অনেক গল্প ভেসে উঠে।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সাংবাদিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজেদের বিবেকের দায় থেকে গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ প্রচার করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি।”

কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, “যেসব গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে, তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা রয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে যেসব গণমাধ্যম দুর্নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে, জাতির সামনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত।”

তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে কোনো গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করা হচ্ছে না। গণমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ থাকবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা যেমন খুব ভালো সাংবাদিকতা দেখেছি, তেমনই খুব বাজে সাংবাদিকতাও দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানে অনেক সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, কেউ কেউ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে একদল সাংবাদিক আন্দোলনকারীদের হত্যা করার জন্য সরকারপ্রধানকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।”

তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাঠের সাংবাদিক ও মফস্বল সাংবাদিকরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। তারা বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।”

তিনি সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রী দিতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম এবং দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আর্থিক সম্মানি হিসাবে মোট ৫৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়।