জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে তৈরি হওয়া চেতনা ও ঐতিহাসিক শক্তিকে ভবিষ্যতের ফ্যাসিবাদী হুমকির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিরোধ বলেই দেখছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি মনে করেন, এ ঐতিহাসিক ঐক্য যেন কোনোভাবেই বিভেদ, বিদ্বেষ বা বৈষম্যের ফাঁদে না পড়ে।
“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে লালন, পালন এবং ধারণ করতে এ অভ্যুত্থানের সকল শক্তির ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে। বিভেদ, বিদ্বেষ কিংবা বৈষম্যের সৃষ্টি হলে তা ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার উপলক্ষ তৈরি করতে পারে।” — শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির শামসুর রহমান মিলনায়তনে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি এবং বাবা সাহরিয়া খান পলাশ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কবি আবিদ আজম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের মুখপাত্র ইমরান মাহফুজ।
ফারুকী আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে একটি কালচারাল ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে, যা এর প্রেক্ষাপট, প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতাকে অমলিন ও অটুট রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের মনন ও বোধকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক ধারার নির্মাণ করবে।”
অনুষ্ঠানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি শান্তা মারিয়া বলেন, “এখনো স্বৈরাচারের দোসরেরা নানা ন্যারেটিভস ছড়াচ্ছে। মানুষের মন মগজ থেকে ফ্যাসিবাদী চিন্তা চেতনা দূর করতে হবে।”
জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের সভাপতি কবি শাহীন রেজা বলেন, “জনতার বিপ্লব কখনো ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই ইতিহাস অবশ্যই লালন করতে হবে।”
কবি জাকির আবু জাফরের অভিযোগ, “জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনা থেকে সরে গেছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।”
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ, কবিতা ও সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন কবি বকুল আশরাফ, ড. কাজল রশীদ শাহিদ, কবি মাহফুজা অনন্যা, কবি বোরহান মাহমুদ, কবি মনসুর আজিজ, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন, ছড়াকার মামুন সারওয়ার, কবি ও সাংবাদিক ফারজানা ববি, কবি রাইয়ান জহির, রাসেল রায়হান, সাম্য শাহ, নিমগ্ন দুপুর, পথিক রানা, তানজীনা ফেরদৌস, নাহিদ যাযাবর, ফরিদুল ইসলাম নির্জন, হালিমা মুক্তা, ফারুক হোসেন খান, শাকিল মাহমুদ, হাসনাইন ইকবাল, নোমান সাদিক ও সাইফ মাহদী।
বিশেষভাবে পরিবেশিত হয় “আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”—এই স্লোগানের সংগীত, যার রচয়িতা আমিরুল মোমেনীন মানিক।
অনুষ্ঠানে ইমরান মাহফুজ সম্পাদিত বিশেষ স্যুভেনির এবং একাধিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এর আগে বিকেল ৩টায় বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের সামনের গলি থেকে ‘বিক্ষুব্ধ কবি সাহিত্যিক’-এর ব্যানারে একটি প্রতিবাদী ‘দ্রোহযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচার এবং ৫ আগস্টকে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ডে’ ঘোষণার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে কবি-সাহিত্যিক ও সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারবিরোধী অবস্থানে সমবেত হন। টানা বৃষ্টির মধ্যেও রাজপথে প্রতিধ্বনিত হয় “স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে” শ্লোগান। পরদিন ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে একদফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা পরে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে।