২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১২ পি.এম

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ রবিবার, সম্প্রচারিত হবে লাইভে

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ রবিবার,  সম্প্রচারিত হবে লাইভে

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রবিবার (৩ আগস্ট) মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে যাচ্ছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এই কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে।

শনিবার (২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আগামীকাল মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। একই সঙ্গে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হবে।”

এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুলাই এই তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজ সাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনাল তার এ আবেদন মঞ্জুর করেছে এবং একই সঙ্গে ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের দিন ধার্য করে।

এই মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে প্রধান আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য প্রসিকিউটররাও। অপরদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং গ্রেফতার হয়ে হাজির থাকা আসামি আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

পলাতক অবস্থায় থাকা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ বাংলা ও ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। পরদিন, অর্থাৎ ১৭ জুন, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু উক্ত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কেউ আত্মসমর্পণ না করায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিযুক্ত করে অভিযোগ গঠনের শুনানি কার্যক্রম এগিয়ে নেয় ট্রাইব্যুনাল। শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে, ১ জুন, ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেয়। সেখানে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করে প্রসিকিউশন।

এই মামলার পেছনের পটভূমিতে রয়েছে গত বছরের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থান, যার মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার বিচারকেই কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলা দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যা ‘মিস কেস’ বা বিবিধ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

এ মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটিতে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সাড়ে ১৫ বছরে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায়, অন্যটি দায়ের হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত সহিংসতায় আওয়ামী লীগ, তাদের সমর্থক ক্যাডার এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশবিশেষের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের বিচার চলছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জনসাধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ সেই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।