মানব কোষ বনাম মাইক্রোব কোষ
এক সময় ধারণা ছিল, মানুষের শরীরে জীবাণুর সংখ্যা মানব কোষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় এই অনুমান সংশোধন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে গড়ে থাকে প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মানব কোষ, আর ৩৮ ট্রিলিয়ন মাইক্রোবিয়াল কোষ—অর্থাৎ প্রায় ১.৩:১ অনুপাতে আমরা নিজের চেয়ে পরজীবী কোষে বেশি পূর্ণ!
আপনার অন্ত্রে, ত্বকে, মুখে ও এমনকি চোখে থাকা কোটি কোটি এই অণুজীবদের সম্মিলিত নাম—মাইক্রোবায়োম। এরা শুধুমাত্র সহাবস্থানই করে না, বরং আপনার হজম, রোগ প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণ-এও ভূমিকা রাখে। হিউম্যান মাইক্রোবায়োম প্রজেক্ট (HMP) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)-এর মতে, এই অণুজীবেরা আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মূল অংশ।
সংখ্যার দিক থেকে হয়তো মানব কোষ সংখ্যালঘু, কিন্তু ভরের হিসেবে ব্যাপারটা একটু আশ্বাসদায়ক—মাইক্রোবিয়াল কোষগুলোর ওজন আমাদের শরীরের মাত্র ১–৩%। অর্থাৎ একটি ৭০ কেজি ওজনের মানুষের শরীরে এই জীবাণুর ওজন মাত্র ১.৫–২ কেজি।
তবে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতা এর চেয়ে অনেক বেশি।
আপনি শুধু একজন মানুষ নন—একটি চলমান, জটিল ও বিস্ময়কর জীবাণু-জীবিত পরিবেশ। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, আমাদের সুস্থতা বজায় রাখতে হলে শুধু শরীর নয়, আমাদের এই জীবাণুদের দিকেও নজর রাখতে হবে। আজ যে “প্রোবায়োটিক” খাবার বা “গাট হেলথ” নিয়ে এত গবেষণা—তা এই অণুজীব সম্প্রদায়ের গুরুত্ব থেকেই।
আপনার শরীর আপনারই, তবুও আপনি একা নন। শত কোটি ক্ষুদ্র অণুজীব প্রতিনিয়ত আপনার শরীরের ভেতরে ও বাইরে বেঁচে আছে, কাজ করছে, আর আপনাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। তারা আপনার শরীরের শত্রু নয়—বরং এক একজন অদৃশ্য মিত্র।
তাই নিজেকে শুধু “মানুষ” ভাবার আগে একবার ভাবুন—আপনি আসলে আধা মানব, আধা মাইক্রোব!