মানবজাতির ইতিহাসে নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও পথপ্রদর্শক। যিনি মানবসভ্যতার জন্য এনেছেন হেদায়াত ও মুক্তির বার্তা। তার জীবনের প্রতিটি পর্বে রয়েছে শিক্ষা, তার প্রতিটি বাক্যে নিহিত রয়েছে চিরন্তন সত্যের দিশা। সৌভাগ্যবান ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম, যারা সরাসরি তার সান্নিধ্যে থেকে ইমান, ইবাদত, নৈতিকতা ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ পাঠ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। তারা নবীজির হাতে হাত রেখে জীবনকে পরিশুদ্ধ করেছেন, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েছেন। কিন্তু আমাদের মতো মুমিনদের জন্য তার সরাসরি সান্নিধ্য এখন সম্ভব নয়। তবে এমন কিছু আমল আছে, যা পালন করলে জান্নাতে তার সান্নিধ্য লাভ করা যাবে। এমন কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো।
অধিক সেজদা করা : রাবিয়া ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাতযাপন করতাম। একদা আমি তার অজু ও ইসতেনজা করার জন্য পানি আনলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে বেশি বেশি সেজদার দ্বারা তুমি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো।’ (সহিহ মুসলিম)
এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ : সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক রাখেন)।’(সহিহ বোখারি)
কন্যাসন্তান লালন করা : আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানের ভরণপোষণ করবে আমি এবং সে এভাবে জান্নাতে থাকব। (মধ্যমা ও শাহাদাত আঙুল যেমন পাশাপাশি থাকে)।’ (জামে তিরমিজি)
বোনদের প্রতিপালন করা : আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (সা.) মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে ইশারা করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণপোষণ করবে কিংবা তিন কন্যা বা তিন বোনের ভরণপোষণ করবে, যতক্ষণ না তাদের বিয়ে হবে কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব।’ (ইবনে হিব্বান)
উত্তম চরিত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না যে, কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে? সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন। রাসুল (সা.) একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (মুসনাদে আহমাদ)
নবীজির প্রতি ভালোবাসা : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, কেয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কেয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোনো কিছু জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসি। তখন তিনি বলেন, তুমি তাদের সঙ্গেই থাকবে, যাদের তুমি ভালোবাসো। আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.)-এর কথার দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোনো কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে ভালোবাসি এবং আবু বকর, ওমর (রা.)-কেও। আশা করি তাদের প্রতি আমার ভালোবাসার কারণে তাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব, যদিও তাদের আমলের মতো আমল আমি করতে পারিনি।’ (সহিহ মুসলিম)
অধিক দরুদ পাঠ : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুনে রাখো, যে আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরুদ পাঠ করবে, নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন সে আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
মহান আল্লাহ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ আমলগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে পরকালে নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্য অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।