আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ১৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক বেসামরিক মানুষ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, “স্থানীয় সময় সোমবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত গাজার শিশু, নারী, আশ্রয়প্রার্থী এবং খাদ্যের সন্ধানে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী একাধিক হামলা চালায়। এসব অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেওয়া হয়নি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই হামলায় কমপক্ষে ১৩৪ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”
এদিকে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে চলমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১,০০০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, “ইসরায়েলি হামলায় গত ২১ মাসে মোট ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ৩৮ হাজারে।”
গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে গাজার মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজা অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ গাজা সিটির দিকে বাধ্যতামূলকভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এরপর প্রায় দুই মাস সংঘর্ষহীন পরিবেশ বিরাজ করলেও, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ইস্যুতে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পুনরায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের হিসেবে, “দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"