২১ জুলাই ২০২৫, ১১:১৬ পি.এম

বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কি আসলেই আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল হ্যাকারগ্রুপ?

বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কি আসলেই আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল হ্যাকারগ্রুপ?

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান এফ-৭ বিজিআই বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে অন্তত ১৭১ জন। নিহত ও আহতদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আছড়ে পড়ায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুরো জাতি যখন শোকাচ্ছন্ন, তখনই নতুন এক উদ্বেগের খবর সামনে আসে—বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি দিয়েছে হ্যাকার গ্রুপ ‘অ্যানোনিমাস’।

এই হ্যাকার গোষ্ঠী আগের দিন এক পোস্টে জানিয়েছিল, “একটি স্কুল ভবন ধ্বংস হবে, অনেক শিশুকে নিঃস্ব করে দেবে। আমরা দেখছি খুব দ্রুত একটি ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে।” বিমান দুর্ঘটনার পর সোমবার (২১ জুলাই) রাত আটটায় ‘অ্যানোনিমাস’-এর কথিত ‘ভেরিফায়েড মেইন পেজ’ থেকে আরও একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসন্ন বোমা হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় জোরালো আলোচনা। অনেকে বিষয়টিকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন, কেউ কেউ আবার এটিকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন। অনেকেই বলছেন, এটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা, যার পেছনে ‘পতিত আওয়ামী লীগ’-এর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি তাদের।

ওই হুমকির বার্তায় ‘অ্যানোনিমাস’ দাবি করে, “আজ থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে একটি বোমা বিস্ফোরিত হবে। আমরা নিশ্চিত যে, উল্লেখিত দেশের শত্রুরা বর্তমানে ষড়যন্ত্র করছে। হোটেল ও হাসপাতালগুলোই এই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু!”

এর কিছুক্ষণ পর তাদের একটি ব্যাকআপ পেজ থেকেও আরও একটি পোস্ট আসে, যেখানে বলা হয়, “যখন আমরা বিমান দুর্ঘটনার কথা বলেছিলাম অনেকেই ভেবেছিলেন আমরা মজা করছি, তখনই ঘটনাটি ঘটে গেল! আমরা এখন বোমা হামলার কথা বলেছি, আপনাদের সকলকে সাবধান থাকতে হবে। আমরা অ্যানোনিমাস!”

অন্য একটি পোস্টে তাদের দাবি, “সামরিক ও অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তাদের মতে, আজ সকালে উত্তর ঢাকার একটি স্কুল ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়, যার ফলে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। এখন অ্যানোনিমাসের বিষয় হলো, আমরা সবসময় সময়ের আগেই এই সতর্কতা পাঠাই।’‘এটা দুঃখজনক যে আমাদের সর্বদা অবহেলা করা হয়, এটা সম্পূর্ণ লজ্জাজনক যে আমাদের সতর্কতাগুলো গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না। ব্যাখ্যাগুলো এখন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত ঘটছে, আপনার পক্ষে ব্যাখ্যাগুলি মনোযোগ সহকারে শোনা এবং এটি আপনার জন্য ক্ষতিকারক হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজে বের করা ভালো।”

তবে এটি স্পষ্ট যে, দুর্ঘটনার আগে ‘অ্যানোনিমাস’ তাদের হুমকির পোস্টে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি, এমনকি কোনো নির্দিষ্ট ভবনের নামও বলা হয়নি। বরং তারা লিখেছিল, “একটি স্কুল ভবন ধ্বংস হবে, অনেক শিশুকে নিঃস্ব করে দেবে। আমরা দের্খছি খুব দ্রুত একটি ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে, এটি ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতার ফলে হবে। আমরা এই ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এই হলেন স্থপতি!”

এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে সিআইডি’র এডিশনাল ডিআইজি (সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড কমান্ড সেন্টার) কিংবা সাইবার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি—ফোন রিসিভ হয়নি, এমনকি পাঠানো মেসেজেরও কোনো জবাব মেলেনি।

তবে একটি অনির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে, মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনার পর ‘অ্যানোনিমাস’-এর নামে ছড়ানো এসব পোস্ট আদতে কোনো ভিত্তিহীন গুজব। তাদের ভাষ্য মতে, এটি মূলত একটি ভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অপচেষ্টা, যার লক্ষ্য দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।

সচেতন মহল মনে করে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের নিজস্ব সাইবার বিশেষজ্ঞ ও ইথিক্যাল হ্যাকারদের আরও বেশি সজাগ হতে হবে এবং সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে গুজবের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুল্লাহ আল জাবির বলেন, ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামে পরিচিত যে ফেসবুক পেজটি থেকে এসব পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে, সেটি একটি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর পেজ। তার ভাষায়, “এই পেজের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। এ নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই, বরং সচেতন থেকে তথ্য যাচাই করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।”